বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য নেই : প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না
এস এম নূর মোহাম্মদ : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না। ধর্ম মানুষের জন্য। মানুষের কল্যাণের জন্য। তবে আমি প্রতিটি ধর্মের প্রতি সম্মান রাখি। প্রতিটি ধর্মের মধ্যেই বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। শুভ বৌদ্ধ পূর্ণিমার দিনে সকল মানুষের শান্তি ফিরে আসুক এই কামনায় করি।
গতকাল বুধবার বৌদ্ধ ধর্মের আলোকে বিশ্ব শান্তি শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রাজধানীর সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা যদি সারা পৃথিবীর বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার দিকে আলোকপাত করি তাহলে সব জায়গাতে যে দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ, বিগ্রহ এবং ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে পাই তার প্রায় প্রতিটির পেছনেই রয়েছে ধর্মীয় কারণ। আর এ কারণেই আমার মনে হয় বিভিন্ন ধর্মীয় যে মতবাদগুলো সেগুলো বিজ্ঞানের পরিপন্থী। বাহ্যিকভাবে দেখলে বিভিন্ন মতবাদের মধ্যে কিছুটা জাদু বিদ্যার সংমিশ্রণ, অতি প্রাকৃত বিশ্বাস, ছিদ্রান্বেষি বিরোধী বিশ্বাসপ্রবণ (সহজে) উপলব্ধি হয়। এটা সত্য যে ধর্ম বেশিরভাগ মানুষকেই আকৃষ্ট করেছে, গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া।
তিনি বলেন, আজকে কেন এত সংঘাত। কেন ধর্ম নিয়ে এত বাড়াবাড়ি? প্রতিটি ধর্মই শান্তির কথা বলে। আমি প্রত্যেক ধর্ম বিশ্বাসীকে আহ্বান জানাই। আপনারা একত্রিত হোন। আপনারা যার যার ধর্মের বাণী প্রচার করুন। যারা বিপথে গেছে তাদেরকে বোঝান।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র সেটা প্রমাণিত। আজকে বৌদ্ধ পূর্ণিমার দিনে সরকারিভাবে অফিস আদালত সব বন্ধ রয়েছে। আমি চলে এসেছি। আবার দুর্গাপূজার সময় মুসলিমরা আসে। ঈদের সময় আমরা যাই। তাহলে কেন এই বিবাদ? কেন এই খুনোখুনি? আমি ধর্মকে দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সবার রক্তের রং লাল। তাহলে আজকে কেন এই সংঘাত? আজকে কেন এই ধর্মকে নিয়ে আমরা বাড়াবাড়ি করি? প্রতিটি ধর্ম আমাদের শান্তির কথা বলেছে। তবে আমাদের মধ্যে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ধর্মের অপব্যাখ্যা করছে। তাদের কারণেই পৃথিবীতে এত সংঘাত হানাহানি।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব মানুষই ধর্মীয় মতবাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। ধর্মের উপর ভিত্তি করেই পৃথিবীতে অনেক মহান ব্যক্তি মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেছে। পক্ষান্তরে এর বিপরীতে অনেক ধর্মান্ধ অসম্পূর্ণ মনোভাবের ব্যক্তি এবং নিষ্ঠুর প্রকৃতির স্বেচ্ছাচারী শাসকের আবির্ভাবও মানব সমাজ প্রত্যক্ষ করেছে এবং এখনো আবির্ভূত হচ্ছে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো মানব সমাজকে নৈতিক মূল্যবোধ মেনে চলার নির্দেশনা দিলেও এ মূল্যবোধ আজ প্রায়ই প্রয়োগ করতে দেখা যায় না। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ