বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ বিদেশে কড়াকড়িতে কমেছে রেমিটেন্স
জাফর আহমদ : বিভিন্ন দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা কড়াকড়ির কারণে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহ কমছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে ‘রেমিটেন্স কমার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত টিম’। তবে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনৈতিক মন্দাও রেমিটেন্স কমার অন্যতম কারণ অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য অনুসন্ধান কার্যক্রম এখনই উপসংহার টানছে না। প্রাসঙ্গিক আরও বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে তারপর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সূত্রটি জানায়, যে সব দেশে বাংলাদেশের লোক কাজ করে সেখানে আগের মত ইচ্ছা করলেই বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে পারছে না। এখন সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ যে সব দেশে বাংলাদেশি কর্মরত আছেন মাস শেষে দেশে পাঠানোর সময় তাদের কর্মস্থলের বেতন কত তার প্রমাণ দেখানো লাগছে। বেতনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হলেই সে টাকা আটকে দিচ্ছে। ওভারটাইমের টাকাও পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে। বেতনের সাথে বেশি অসঙ্গতিপূর্ণ হলে বিভিন্ন প্রকার এজেন্সির জেরার মুখে পর্যন্ত পড়তে হয়। এতে বৈধপথের পরিবর্তে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছে। এ সব কারণে দেশে আগের মতই টাকা এলেও বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা আসছে না। এ কারণে হিসাবও সংরক্ষণ হচ্ছে না এবং আপাতদৃষ্টিতে দেশে কম টাকা আসছে বলে মনে করছে।
বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহ কমে আসার অন্যতম কারণ সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের প্রধান উৎপাদন পণ্য তেলের দাম কমে আসা। তেলের দাম কমার কারণে সেখানে তাদের উন্নয়ন কাজও কমেছে। এতে একদিকে তারা বিদেশে শ্রমিকদের উপার্জিত অর্থের উপর ট্যাক্স বসানো শুরু করেছে। এ জন্য তারা অবৈধ পথে টাকা পাঠানোর চেষ্টা করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টাকা পাচারের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের নাম উঠে আসছে। বিশেষ করে এ সব অঞ্চলের মানুষের উপার্জিত টাকা দেশ থেকে পাচার করে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিদেশে ব্যবসা বাণিজ্যের বৈধ মুনাফাও সুইজ ব্যাংকে নিয়ে যাচ্ছে। তেলসমৃদ্ধ দেশ ও উন্নত বিশ্বে থাকা মানুষরা এ সব আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত থাকা সন্দেহ করছে। এর ফলে রেমিটেন্সসহ ওই সব দেশে বহির্মুখী সব ধরনের আর্থিক লেনদেনে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের রেমিটেন্স প্রবাহে।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা মোট ১ হাজার ২৮ কোটি ৭২ লাখ (১০.২৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে দেশে এসেছিল ১ হাজার ২২৫ কোটি ডলার। সে হিসাবে এই ১০ মাসে প্রবাসী আয় কমেছে ১৬ শতাংশ।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত কয়েক বছর ধরে প্রবাসী আয় মাসে ১০০ কোটি ডলারের বেশি থাকলেও গত নভেম্বর ও ডিসেস্বরে তা নেমে আসে যথাক্রমে ৯৫ কোটি ১৩ লাখ ডলার ও ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলারে। এরপর জানুয়ারিতে ১০১ কোটি ডলার দেশে আসে। প্রবাসী আয়ের নেতিবাচক প্রবণতা প্রথম দেখা দেয় ২০১৩ সালে। ওই বছরে প্রবাসীরা ১ হাজার ৩৮৩ কোটি ডলার পাঠান, যা ২০১২ সালের তুলনায় ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ভরযোগ্য ওই সূত্রটি জানায়, বেশিরভাগ প্রবাসী মনে করছে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে সম্প্রতি যে কড়াকড়ি আরোপ করেছে শিথিল করলেই আগের মত সবাই বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাবে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ চান প্রবাসীরা। তবে আরও কি কি কারণ আছে অনুসন্ধান কাজ পুরোপুরি নিশ্চিত ও সমন্বয় করার পর করণীয় নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ