ভিশন ২০৩০, বিভ্রান্তি কাটেনি
ড. বদরুল হাসান কচি
জনগণের কাছে আশ্বাসের বাণী আর স্বপ্নের ঝুড়ি খুলে দিয়েছেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের মানুষের সামনে ‘ভিশন ২০৩০’ নিয়ে এসেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে বেকারত্ব দূর হবে, কৃষিতে বিপ্লব আর চাষাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হবে, প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ আর গ্যাসের চুলা জ্বলবে ইত্যাদি; এতসব কমন কথার ভিড়ে মূলত জানার চেষ্টা করেছি ভিশনে নতুনত্ব কি আছে? দুটো বিষয় চিহ্নিত করলামÑ (এক) প্রধানমন্ত্রীর ‘একক নির্বাহী ক্ষমতা’ ‘দেশে একনায়কতন্ত্র শাসনের’ জন্ম দিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতায় ভারসাম্য আনবেন। (দুই) জাতীয় সংসদকে সকল কর্মকা-ে পরিণত করা হবে এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
কথা হলো বিএনপি নেত্রী তিন দফা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পরে ক্ষমতাহীন হয়ে কেন মনে হলো, প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা একনায়কতন্ত্র শাসনের জন্ম দিচ্ছে? ক্ষমতায় থাকাকালীন যদি তিনি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতেন তাহলে সাধুবাদ পেতেন নিঃসন্দেহে। আজ যদি তিনি ছাড়া অন্য কেউ, যিনি প্রধানমন্ত্রী অতীতে ছিলেন না, তেমন কেউ এ কথা বলতেন তাহলে জনগণ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করতে পারতেন। এখন সে সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। দ্বিতীয়ত যেটি দেখলাম, সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছেন; কিন্তু তা সাধারণের কাছে মোটেই বোধগম্য নয়। সুতরাং এ নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজনও নেই। তবে একটি কথা না বললেই নয়, গত সংসদে বিএনপি যখন প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল তখন আপনাদের কেবল সংসদে সদস্য পদ টিকিয়ে রাখার দিন সংসদে যেতে দেখা গেছে। সেই আপনারা যদি আজ সংসদের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন সে তো ভালো কথা; তবে জনপ্রতিনিধি হয়ে সংসদ এড়িয়ে চলার যে পুরনো অন্যায়টি করেছেন তার জন্য আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করে আপনারা জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলে আমরা খুশি হই এবং আপনাদের বর্তমান অবস্থানকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে ধরে নিব।
বরং সার্বিকভাবে এটাই প্রতীয়মান হয়, বিএনপি তাদের ভিশনের মিশন নিয়ে নিজেরাই অস্পষ্ট। এখনো নির্বাচনের বাকি দেড় বছরের বেশি। এখনই কেন এত স্বপ্ন নিয়ে হাজির হলেন সেটা ভোটারদের কাছে বোধগম্য নয়। তাছাড়া আপনারা নিয়মিত বলে বেড়াচ্ছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে আপনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না, অসাংবিধানিক পন্থায় অন্য পদ্ধতির সরকারের আশ্রয় খুঁজছেন নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য। কিংবা এই রূপকল্প-২০৩০ উপস্থাপনকালেও নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা ছিল না। আমার ধারণা, আপনাদের দ্বিমুখী অবস্থানে বিএনপির সমর্থকরাও হয়তো বিভ্রান্ত। ধরেই নিলাম, আপনারা এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না; তাহলে কি জাতিকে এ রূপকল্প ২০৩০ না দেখিয়ে আগে আপনাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিবেশ তথা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য যে সরকার চাচ্ছেন সেটি নিয়ে জোরদার হওয়া জরুরি ছিল না? ভোটারদের বিভ্রান্তিতে রেখে রূপকল্প দেখিয়ে কি লাভ! আগে ভোটারদের বিভ্রান্তি কাটানো উচিত। নচেৎ এটা হাস্যকর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
লেখক: আইনজীবী ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান