কেন এই সিরিজ ধর্ষণ?
ওয়াসিম ফারুক
দিনাজপুরের ইয়াসমিনের কথা হয়তো অনেকেই ভুলে গেছি। ভুলে যাওয়ারই তো কথা! ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট ইয়াসমিন ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় হয়। উত্তাল হয় গোটা দেশ। প্রতিবাদ, প্রতিরোধে মানুষ গর্জে উঠে। গুলি চালায় পুলিশ। এতে প্রাণ হারান অন্তত সাতজন। আর পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে অগণিত মানুষকে। কারফিউ দিতে বাধ্য হয় সরকার। অতপর ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে রংপুর জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় ইয়াসমিনের ধর্ষকদের। ভেবেছিলাম অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়েছে। হয়তো আর কোনো মা-বোন ধর্ষণের শিকার হবেন না, এমন বীভৎস দৃশ্য দেখতে হবে না।
প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয় ধর্ষণের। দুই একটি ধর্ষণের ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করলেও, জনতার সামনে এলেও বাকি প্রায় সব ঘটনাই ধামাচাপা পড়ে যায়। গত বছর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু ধর্ষণের পর খুন হন। তার লাশ পাওয়া যায় দেশের অন্যতম নিরাপদ স্থান কুমিল্লা সেনানিবাসের সীমানার ভেতর। তনুর ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা উত্তাল হয়েছিল পুরো দেশ। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসÑ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেউই আজও খুঁজে বের করতে পারল না তনুর ধর্ষণ ও হত্যার আসামিদের। সম্প্রতি বনানীর এক অভিজাত হোটেলে বন্ধুর জন্মদিন উদযাপন করার কথা বলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের শিকার হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী। ধর্ষকবন্ধু দেশের খ্যাতনামা স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিলদার আহমেদের ছেলে শাফাত আহমেদ ও তার আরও দুই সহযোগী। ধর্ষণের প্রায় মাস খানেক পরে ভয়কে জয় করে দুই ছাত্রী আইনের আশ্রয় চান। কিন্তু আইন সহজেই তাদের আশ্রয় দেয়নি। টানা আটচল্লিশ ঘণ্টা যুদ্ধ করে দুই ছাত্রী পুলিশকে বাধ্য করে মামলা নিতে।
যারা এ ধরনের অপরাধ করছে তাদের আছে টাকার জোর, ক্ষমতার জোর। নানান জোরে নানান সময় কোনোভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে। তাতে অপরাধীরা নতুন করে আপরাধ করার সাহস পাচ্ছে। কিন্তু স্বাধীন এই বাংলাদেশের জন্য কখনো সম্মানজনক নয়। লাখো শহিদের স্বাধীন এই ভূখ-ে এমনটি হতে পারে না। অপরাধী যেই হোক রাষ্ট্র তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবে এমনটিই প্রত্যাশা করে সাধারণ মানুষ। অপরাধীর যথাযথ সাজা নিশ্চিত হলে ধর্ষণের মতো এমন ঘটনা কমে আসবে বলেই মনে করি।
লেখক: কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান