কেন এত অজনপ্রিয় ওঁলাদ?
রাহাত মিনহাজ
২০১২ সালে নিকোলাস সারকোজিকে হারিয়ে ইউরোপের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ। এরপর পাঁচ বছরে নানা কারণে বিতর্কিত ছিলেন এই প্রেসিডেন্ট। শেষদিকে ফরাসি জনগণের কাছে তিনি এতটায় অজনপ্রিয় হিসেবে গণ্য হন যে, দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনে লড়ার সাহস তিনি আর পাননি। যদিও প্রথম দফা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করার পর দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনে লড়া দেশটিতে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। বলা হচ্ছে, ১৮৮৪ সালে থেকে এ পর্যন্ত যত প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে অজনপ্রিয় ওঁলাদ। ওঁলাদের এই অজনপ্রিয়তা নিয়ে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী ডেইলি মেইল অনলাইন। পত্রিকাটির ভাষ্য মতে, ওঁলাদকে উল্লেখ করা হয়েছে মিস্টার ফোর পার্সেন্ট নামে! অর্থাৎ ওঁলাদের জনপ্রিয়তা এখন মাত্র চার শতাংশ অথবা তার চেয়েও কম। কিন্তু ওঁলাদের এই অবস্থার পেছনে মূল কারণগুলো কি কি?
ওঁলাদের বড় ব্যর্থতা সন্ত্রাসবাদকে মোকাবিলা না করতে পারা। তার শাসন আমলে বারবার রক্তাক্ত হয়েছে ফ্রান্স। বড় বড় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলা না ঠেকাতে পারাকেই বলা হচ্ছে তার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। ওঁলাদ ব্যর্থ ছিলেন অর্থনীতিতেও। তিনি বেকারত্বের হার কমাতে ব্যর্থ হয়েছেন। নতুন চাকরির সুযোগ তৈরিতে তার কোনো উদ্যোগই সফল হয়নি। সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন ছিলেন তার অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে বিবাদ তৈরি হওয়ার পর ওই পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন ম্যাকরন। ওঁলাদ সবসময়ই নিজেকে ‘এন্টি-রিচ’ হিসেবে দাবি করলেও তিনি গরিবদের জন্য কিছুই করতে পারেননি। বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজের দরিদ্রদের তিনি কটাক্ষ করেছেন। যা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি বিপুল জনগোষ্ঠী।
এছাড়া ওঁলাদ কটাক্ষ করেছিলেন ফরাসি ফুটবল দলকেও। যা এর আগে প্রকাশ্যে কখনই করেননি কোনো প্রেসিডেন্ট। এছাড়া ব্যক্তিগত জীবনের কেলেঙ্কারি তো ছিলই। ওঁলাদই ফ্রান্সের একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি কোনো প্রোটকল ছাড়া একটা মোটরবাইকে করে তার এক প্রেয়সী অভিনেত্রী জুলিয়া গায়েটের সঙ্গে চুপি চুপি দেখা করতে যেতেন। এর আগে ২০১৪ সালে তার বিচ্ছেদ হয় ফাস্ট লেডি ভ্যালেরির সঙ্গে। বলা হচ্ছে এসব কারণেই ডুবেছেন ওঁলাদ সঙ্গে ডুবিয়েছেন ফ্রান্সের সোস্যালিস্ট পার্টিকে। যার ফলাফল হিসেবেই চার্ল দ্য গলের পর সবচেয়ে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিদায় ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের।
লেখক: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান