যতবেশি ইতিবাচক রাজনীতি, ততবেশি লাভ আওয়ামী লীগের
সুভাষ সিংহ রায়
বিএনপি ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছে। তাদের এই ভিশনকে আমি স্বাগত জানাই। তবে বিএনপির এই ভিশনকে নির্বাচনি ইশতেহার বলা যাবে না। কারণ ২০০৮ সালে যখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভিশন-২০২১ ঘোষণা করা হয় তখন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এ নিয়ে ঠাট্টা মসকরা করেছিলেন। ওই ভিশনকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন, মনে হ”িছলÑ কী অদ্ভুত একটা জিনিস এসেছে বাংলাদেশে! দেশের মানুষের মস্তিষ্কে ভিশন এবং রূপকল্প শব্দটির বাংলা এবং ইংরেজি শব্দ দুটোই গেঁথে আছে। এটাকে বিএনপি এক ধরনের অনুসরণ করার চেষ্টা করেছে। এ রকম চেষ্টা করতে চাইলে করুক তারা। তবে সঠিকভাবে যদি করে সেটা ভাল কথা। কারণ জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি থেকে সরে এসে যে লেখাপড়ার দিকে ঝুঁকছে, গঠনমূলক কাজের দিকে ঝুঁকছে এটাকে আমি স্বাগত জানাই। যদিও তাদের এই ভিশন নিয়ে আমার ভীষণ আপত্তি রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া তার বক্তৃতার একদম শেষেই বলেছেন যে, তিনি যে ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করলেন তা বাস্তাবায়ন করা অনেক কঠিন হবে। তিনি নিজেই বলেছেন, ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়ন করা কঠিন, আবার এটাও বলেছেন, অসম্ভব নয়।
বিএনপির ঘোষিত ভিশনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ নেই। বাংলাদেশের যে কাজগুলোতে অগ্রগতি হয়েছে গত আট বছরে, সেই কাজগুলোকেই তিনি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন আইসিটি সেক্টর সম্পর্কে তিনি বলেছেন যে, এ খাতে কোনো কাজই হয়নি! অথচ বিএনপির সময় সমুদ্রতল দেশ থেকে ইন্টারন্টে সংযোগটি তখন প্রথমে তিনি নেননি। বলেছেন যে, আমাদের দেশের সব তথ্য নাকি পাচার হয়ে যাবে! পরবর্তীতে তিনি ক্ষমতায় এসে আবার এটা নিয়েছিলেন। তখন প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়েছে। এবার চিন্তা করে দেখুন, প্রথমেই যদি আমরা ইন্টারনেট সংযোগ বিনামূল্যে নিতাম আজকে আমাদের অগ্রগতি কোন জায়গায় যেত? আজকে দেশে ১২ কোটি ৮৯ লাখ মোবাইল গ্রাহক রয়েছে, তার মধ্যে ৩৮ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।
বিএনপির কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ কখনো গোছানো কিছু আশা করেনি। এই গোছানোর যে লক্ষণটি তারা প্রকাশ করেছে, দেশি-বিদেশি বন্ধুদের পক্ষ থেকে কিংবা যে কারণেই হোক একধরনের গোছানো গোছানো ভাব দেখানো। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। কেননা বঙ্গবন্ধুর শাসনামল, শেখ হাসিনার ’৯৬ সালের ৫ বছর, সর্বশেষ প্রায় ৯ বছরÑ রাষ্ট্রপরিচালনার সময়টিতে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা যা কিছু করেছেন সবকিছুই জনকল্যাণমূলক। তাদের কাজকে সবাই অনুসরণ করার চেষ্টা করছে এটা তো খুব ভাল লক্ষণ। এ নিয়ে তো আওয়ামী লীগের খুশি হওয়ার কথা। কারণ রূপকল্প শব্দটি আওয়ামী লীগই মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিল, সেটাই এখন বিএনপি অনুসরণ করছে।
রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রীর ভারসাম্যের কথা বলেছেন বেগম খালেদা জিয়া। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যকে তো নষ্ট তিনিই করেছেন। আমাদের নিশ্চয় মনে আছে, আব্দুর রহমান বিশ্বাসের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার যে ভূমিকা ছিল, তাকেই রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন, এই কাজটা কে করেছেন? বদরুদ্দোজ্জা চৌধুরীকে, কে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন? তাকে রেললাইন দিয়ে ধাওয়া করা থেকে শুরু করে তার বাড়িতে আগুন ধরানো, রাষ্ট্রপতির এই পদটাকে হেয় করেছেন কে বা কারা? এটা বলুক যে, আমরা অতীতে রাষ্ট্রপতির পদটাকে কি করেছি। বাংলাদেশে শেখ হাসিনাই একমাত্র নেত্রী, যিনি দলের বাইরে শাহাবুদ্দিন আহমেদকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন এই পদটাকে গুরুত্বপূর্ণ করার জন্যই। তখন আওয়ামী লীগের কেউ চানননি যে দলের বাইরে থেকে কেউ রাষ্ট্রপতি হোক। তারপরেও শেখ হাসিনা তা করেছিলেন। এটার জন্য তাকে ২০০১ সালে ১ অক্টোবর অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে।
আপনি এই সমাজব্যব¯’ায় রেইনবো সোসাইটির কথা বলছেন, চমৎকার একটি শব্দ। আপনি রংধনু সমাজের কথা বলছেন সেখানে তো নানান মানুষ থাকবেন। বিএনপি কি অস্বীকার করতে পারবে তাদের সময় জঙ্গিবাদের প”ষ্ঠপোষকতা করা হয়নি? বিএনপির ভিশন-২০৩০ ঘোষণার ফলে যদি ইতিবাচক কিছু হয়, রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসে তাহলে তো আওয়ামী লীগেরই লাভ। যতবেশি ইতিবাচক রাজনীতি হবে বাংলাদেশে, ততবেশি লাভ আওয়ামী লীগেরই।
পরিচিতি: কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ/সম্পাদনা: আশিক রহমান