১১ মাসের শিশু যখন আসামি
মিঠুন মিয়া
জনাকীর্ণ আদালত প্রাঙ্গণে মায়ের কোলে ক্যামেরার সামনে কান্না করছে ১১ মাসের শিশুপুত্র মো. রুবেল। তার এই কান্নার ভাষা কী? রুবেল কি জানে চুরি ও মারামারি মামলার আসামি সে। তার কান্নার অর্থ কি প্রতিবাদ? কান্নার মাধ্যমে রুবেল কি বলতে চাচ্ছে, সে আসামি হতে পারে না? পৃথিবীতে এসে কোনোকিছু না বুঝে ওঠার আগেই নিষ্পাপ শিশু রুবেল আসামি হয়ে গেল। কেবল তাই নয়, ওই মামলায় মৃত ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তি কি কবর থেকে উঠে এসে চুরি ও মারামারির কাজে লিপ্ত ছিল? চার্জশিটে শিশু রুবেল ও মৃত ব্যক্তি আরিফুর রহমানকে পলাতক দেখানো হয়েছে। রাজধানীর মিরপুর থানার মধ্য পাইকপাড়ার ১৬৩ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মো. হাবিবুর রহমানের দায়ের করা একটি চুরি ও মারধরের মামলায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। একই মামলায় মধ্য পাইকপাড়ার ১৭৩ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা আবুল কাশেমের ১১ মাসের শিশুপুত্র মো. রুবেলকে আসামি করা হয়। রুবেল গত বছরের ৬ জুন জন্মগ্রহণ করে। অপরদিকে আরিফুর রহমান ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। ওই দুইজনের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৬ জুন মিরপুরের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের সময় রুবেলের বয়স ছিল ২০ দিন এবং আরিফুর রহমান ঘটনার তিন বছর আগে মারা যান। এতে স্পষ্ট যে, ঘটনাস্থলে না গিয়ে, স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ না করে বাদীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা চার্জশিট দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। একজন শিশু মানেই আনন্দ। সঙ্গী তার খেলনা আর ঘুম। যে সময় রুবেলের খেলনা হাতে ব্যস্ত কিংবা ঘুমানোর থাকার কথা। কিন্তু তার পরিবর্তে আসামি হয়ে আদালতে মায়ের কোলে কান্নারত রুবেল। শিশুরাও অপরাধ করতে পারে। তাই বলে ১১ মাসের এই শিশুটি কি এমন অপরাধ করতে পারে। যে শিশুর আগামী দিনের ভবিষ্যৎ কর্ণধার হওয়ার কথা, সেই শিশুকে দেখা যায় আসামির কাঠগড়ায়। এটি শিশু আইন ও শিশু সনদের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এর আগেও আমরা দেখেছি শিশুকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করার দৃশ্য। এতে শিশুটির মনের ওপর যথেষ্ট বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কাজেই কাউকে মামলায় আসামি করার আগে ঘটনাস্থলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা বাঞ্ছনীয়।
লেখক: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান