সরকারি বন্দোবস্তের জমি দখল পাচ্ছে না ১৪৯ ভূমিহীন পরিবার
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার হরিশ্বর তালুক গ্রামের ১৪৯ ভূমিহীন পরিবার সরকারের বন্দোবস্ত দেয়া ১৫৭.৩০ একর খাস জমির দখল না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে ভূমিদস্যুরা এসব ভূমি দখলে নিতে এ ভূমিহীন পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করতে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়াসহ ৮ জন ভূমিহীনকে হত্যা করেছে। এমনকি সে সময় বন্দোবস্তকৃত জমির রেকর্ডপত্র নষ্ট করার জন্য তৎকালীন পাংগা তহসিল কাঁচারী অফিসটিও পুড়িয়ে দেয় ভূমিদস্যুরা। বন্দোবস্তকৃত ১৫৭.৩০ একর জমি থেকে বিতারিত এসব ভুমিহীন পরিবারগুলো বর্তমানে পাশ্ববর্তী ছিনাই ইউনিয়নের মহিদেব মীরের বাড়ি এলাকায় যাযাবরের মতো জীবনযাপন করছে।
এরপর থেকে ভূমি দস্যুরা ভুমিহীনদের নামে বন্দোবস্ত দেয়া এসব জমি নিজেদের নামে কাগজ তৈরি ও রেকর্ড করে নিতে ভূমি অফিস, বিভিন্ন দপ্তরে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এদিকে ভূমিহীন পরিবারগুলো বন্দোবস্তকৃত জমির দখল ফিরিয়ে পেতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে ধরনা দিচ্ছেন। এতেও কোন কাজ না হওয়ায় জমির দখল ফিরিয়ে পেতে ভূমিহীন পরিবারগুলো মানব বন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন। ভূমিহীন রিফিউজি পরিবারগুলো জানায়, ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর আসাম থেকে আসা ১শ ৪৯টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাস করার জন্য রাজারহাট উপজেলার হরিশ্বর তালুক মৌজার সি,এস-২৫ খতিয়ানের ২০৭ একর জমি হুকুম দখল করে ত্রাণ ও পুনবাসন মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেয় সরকার। এরপর ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ থেকে ২০৭ একরের মধ্যে ১৫৭.৩০ একর জমি ১৪৯ জন ভূমিহীন কৃষকের মাঝে ১৯৫৫ সালের ১৯ এপ্রিল রংপুর জেলা প্রশাসক বরাদ্দ দেয় এবং তাদের নামে এস,এ রেকর্ড হয়। এরপর ভূমিহীনরা বরাদ্দ পাওয়া জমিতে বসবাসসহ চাষাবাদ শুরু করে। এ অবস্থায় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা জোটবদ্ধ হয়ে রিফুজিদের নামে বন্দোবস্তকৃত জায়গায় জোরপƒর্বক ঘর-বাড়ি উঠানোসহ আবাদি জমি দখল করতে থাকে। এঘটনায় রিফিউজি পরিবারগুলো ভূমিদস্যুদের বাধা দিলে ভুমি দস্যুরা তাদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে রিফুজিদের পর্যায়ক্রমে বিতারিত করতে থাকে।
এসময় ভূমি দস্যুরা দুই দফায় রিফুজি পরিবারের ৯ জনকে হত্যা করে। এমনকি জমির সরকারি রেকর্ডপত্র নষ্ট করতে তৎকালীন ভুমি অফিসও পুড়িয়ে দেয়। ভূমিহীন পরিবারের নিজাম উদ্দিন, নওশেদ আলী, লালু শেখ, তাইজ উদ্দিন ও ডালিমন বেওয়া জানান, ভূমিদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় এবং জমিতে গেলে অব্যাহত প্রান নাশের হুমকী দেয়ায় আমরা জমিতে যেতে পারছি না।
আমরা কেউ ভ্যানগাড়ি চালিয়ে, কেউ দিনমজুরের কাজ করে খুব কষ্টে দিন যাপন করছি।
এব্যাপারে রাজারজাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরজামান হক বুলু জানান, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে রিফিউজি ১৪৯টি পরিবার হরিশ্বর তালুক মৌজা থেকে ভুমিদস্যুদের অত্যাচারে বিতারিত হয়ে ছিনাই ইউনিয়নের মহিদেব মীরের বাড়ি এলাকায় বসবাস শুরু করে। বর্তমানে পরিবারগুলো অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, রিফুজি কিংবা ভুমিহীনদেরকে সরকারী খাস জমি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়ার পর এ জমির মালিক অন্য কেউ হতে পারবে না। কিন্তু বন্দোবস্ত দেয়া জমির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের। তবে ভূমিহীনরা যদি আদালতের শরণাপন্ন হয় সেক্ষেত্রে সরকার সহযোগী বাদী হয়ে ভুমিহীনদের সহযোগিতা করবে। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান