শেয়ারবাজার মৃত থাকলে অর্থনীতি চাঙ্গা থাকে না
অধ্যাপক আবু আহমেদ
নতুন জাতীয় বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কিছু প্রণোদনা থাকলে ভাল হবে। করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স লিস্টেড কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে যদি কমিয়ে আনা যায় সেটা বাজেটে সহায়তা করবে। লিস্টেড কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ট্যাক্স কমিয়ে আনতে হবে। সারা পৃথিবীতে এখন ট্যাক্স কমিয়ে আনছে। বাংলাদেশ ট্যাক্স কমানোর ক্ষেত্রে একটু ভূমিকা রাখা দরকার। এত বেশি ট্যাক্স দিয়ে এখানে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে চান না। ধনী লোকেরা বিদেশে টাকাপয়সা পাচার করছেন। শেয়ারবাজারের কোম্পানিগুলো ডিভিডেন্ড দেওয়ার ক্ষমতা আরও বাড়বে যদি ট্যাক্স কমিয়ে আনা হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও উপকৃত হবে।
দেশে দুর্নীতি হচ্ছে, অর্থ বিভিন্নভাবে লোপাট হচ্ছে। এই যে আমরা বড় বড় প্রজেক্ট হাতে নিচ্ছি, দুই বছরের প্রজেক্ট চার বছরেও শেষ হয় না, টাকা থাকতেও অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে, এটা তো অন্যান্য দেশের সিস্টেম না। দুই বছরের কাজে একটু সময় বেশি লাগতে পারে, কিন্তু দুই বছরের কাজ চার বছরে গেলে খরচ বাড়াতে থাকে। তাহলে তো পুরনো কাজে আরও জোগান দিতে হবে। নতুনভাবে কোনো প্রকল্প হাতে নিতে পারবে না। চায়নার কিছু বিনিয়োগ দরকার ছিল, ওরা যদি বাংলাদেশকে সত্যিই সাহায্য করতে চায়, বিনিয়োগ করতে চায় সেক্ষেত্রে আমাদের দরজাটা খোলা রাখা উচিত। বাংলাদেশ অন্য ইকোনোমির সঙ্গে ট্রাই অ্যাক্ট না করলে অন্য ধনী লোকেরা কখনোই এখানে নিরাপদ অনুভব করবে না। বিচ্ছিন্ন ইকোনোমিতে কোনো দেশের ধনী লোকেরা নিরাপদ অনুভব করে না। এটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে। এটা আফ্রিকাতে দেখা গেছে। গরিবের জন্য আসলে কোনো অপশন নেই, এরা যত চিৎকার করুক তারা এখানেই থাকবে। ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া, বাংলাদেশ ইকোনোমিতে গ্লোবাল ইকোনোমির সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে হবে। ফ্রি ইকোনোমি জোন তৈরি করা, যা এশিয়ার বিভিন্ন দেশে করেছে।
চায়না, মিয়ানমার, ভারত সব জায়গায় এটা হচ্ছে না। ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না। বাংলাদেশ যদি একাও চীনের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক করতে চায় তাও ভাল হবে। বাংলাদেশকে একটু চিন্তা করতে হবে কারা আমাদের ইকোনোমিকে উপরে নিয়ে যেতে পারে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা। শ্রীলঙ্কাও একটা এগ্রিমেন্ট সাইন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ এই কাজগুলো করে না। আমি মনে করি এই বিষয়গুলোতে একটু গুরুত্ব দেওয়া দরকার। ট্যাক্সের বিষয়টা কমিয়ে আনতে হবে। পৃথিবীর সব জায়গায় এখন ট্যাক্স কমিয়ে আনছে। যুক্তরাষ্ট্র ট্যাক্স কমিয়ে দিচ্ছে। কর কমানোর একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশকেও সেদিকে হাঁটতে হবে। এগুলো করলে লিস্টেড কোম্পানিগুলো উপকৃত হবে, শেয়ারবাজার উপকৃত হরে, বিনিয়োগকারীরাও উপকৃত হবে।
কর কম হলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হবে। বিনিয়োগের একটা বেটার অপশন তৈরি হবে। তারা মনে করবে, সুদের হার কম বিনিয়োগে সহায়তা করবে। এগুলো বাজেট প্রপোজালেরে মাধ্যমে পাস করিয়ে নিলে ইকোনোমির জন্য ভাল হবে। কারণ শেয়ারবাজার মৃত থাকলে অর্থনীতি কখনো চাঙ্গা থাকে না।
পরিচিতি: অর্থনীতিবিদ
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি/সম্পাদনা: আশিক রহমান