সাঈদির মৃত্যুদ- হলো না, রিভিউ খারিজ
এস এম নূর মোহাম্মদ : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদ-ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর দুটি রিভিউ আবেদনই খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে তাকে আপিল বিভাগের দেওয়া আমৃত্যু কারাদ-ই বহাল থাকল। তার মৃত্যুদ- হলো না।
গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো.আবদুল ওয়াহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। জামায়াত নেতাদের মধ্যে সাঈদীই যার মৃত্যুদ- বহাল রাখেনি সর্বোচ্চ আদালত।
গতকাল সকাল সোয়া ৯টার দিকে শুনানি শুরু করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি তাকে একজন স্বাক্ষির সাক্ষ্য পড়তে বলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল তখন তা পড়েন। এসময় বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা ওই ঘটনার কিছুটা বলেন। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আমার লারনেড ব্রাদার কম্পিউটারের মতো। ভাল মনে রাখতে পারেন। তখন অ্যাটনি জেনারেল বলেন, আপনার দুজনেই। আপনারা না থাকলে তখন ফিল করবো। এপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, একটা রাষ্ট্রের কাছে ব্যাক্তি না প্রতিষ্ঠান বড়। ব্যাক্তি বঙ্গবন্ধু না থাকার পরও দেশ চলছে। আমরা একটা ইয়ে করে যাচ্ছি। পরেও চলবে। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল আসামি পক্ষের তুলে ধরা যুক্তির বিষয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বার বার একজন বিচারপতির বিষয়টি সামনে আনেন। যা আসামি পক্ষ তুলে ধরেছে। এসময় প্রধান বিচারপতি বলন, ক্রিমিনাল জুরিসপ্রুডেন্স দেখবেন। তারা মাইনরিটি নিয়ে বলতে পারে।
অ্যাটর্নি জেনারেল দলের বিষয়টি আনলে প্রধান বিচারপতি বলেন, উনিতো এ লাইনেরই লোক। এরাইতো স্বাধিনতা যুদ্ধে ইয়ে করেছে। এ পর্যায়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন দাড়ালে আদালত তাকে থামিয়ে দেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, সেন্টেন্সের বেলায় আমরা একটা ফিলসফি মেন্টেন করি। এপর্যায়ে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ৭১ সালে পাকিস্তানিরা আসলে আমরা যতদূর সম্ভব পালিয়ে যেতাম। আর তারা (সাক্ষিরা) দেখলেন, শুনলেন সাঈদী কী করেছে। এটা কিভাবে সম্ভব। পাকিস্তানিরা তাদের কিছুই না করে ছেড়ে দিয়েছে?
এসময় বিচারপতি ওয়াহাব মিঞা অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একবার যাবজ্জীবন হওয়ার পর ফাঁসি হয়েছে পৃথিবীতে এমন একটা উদাহারণ দেখান। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই কেইসে হওয়া উচিত। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা স্বীকার করি হওয়া উচিত। আপনি ১০৯ পড়েন। মি.অ্যাটর্নি জেনারেল আপনি শুধুমাত্র সরকারের নন, রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল। আপনি সবার। অপরাধিরও। আপনি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। আপনি ন্যায়ের পক্ষে বলবেন। যাতে নির্দোষ কেউ সাজা না পায়। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি ম্যাটিরিয়ালস পেয়েছি।
এসময় বিচারপতি ওয়াহাব মিঞা বলেন, সারা পৃথিবীতে একটা দেখান। এটা হয় না। প্রধান বিচারপতি এসময় প্রসিকিউটরদের ব্যার্থতার বিষয়টি তুলেন। তিনি বলেন, প্রসিকিউশন-তদন্ত কর্মকর্তা প্রমাণ করতে পারলে জাজমেন্টের মোটিভ অন্যরকম হতো। এরপর আদালত ডিসমিসড বলে এজলাস ত্যাগ করেন।