রেইনবো নেশন এর ধারণা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আছে এদেশে এবারই প্রথম উপস্থাপন করলো বিএনপি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : রেইনবো নেশন শব্দটির সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতি পরিচিত নয়। তবে এটা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনেক পুরনো বিষয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। এখানে রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতির অনেক বিষয় আছে যেগুলো চর্চা করে না। রেইনবো নেশনেরও বিষয়টিও চর্চা করেনি কেউ। কোন দিন কোন দল বলেনি। কিন্তু বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে শব্দটি দেশের মানুষের সামনে এনেছে। এখন নতুন মনে হলেও এবং আওয়ামী লীগ হাসাহাসি করলেও আগামী দিনে এগুলো হবে। কারণ রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে । এই সব কথা বলেছেন বিশিষ্ট জনেরা। বিএনপির আগামী দিনের পরিকল্পনা হচ্ছে একটি রেইনবো শ্যাডো নেশন গঠন করা। এটা করা কঠিন হবে বলে মনে করছে বিএনপি ও বিশিষ্টজনরা। তবে তারা আশা ধরে রাখতে চায়।
বিএনপির ভিশন ২০৩০ ও রেইনবো নেশন নিয়ে রংধনু জাতি নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে এই সমালোচনাকে বিএনপি মনে করছে যারা করছে সেটা তাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অজ্ঞতা। রাজনীতিতে অনেক কিছু জানার আছে। এই জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান সকল রাজনীতিবিদেরই জানা দরকার। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নুহ আলম লেনিন একটি টিভিতে বলেছেন, বিএনপি রংধনু জাতি গঠন করবে। তারা যা বলেছে সেটা সম্ভব না। আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এখন মেধা শূন্য হয়ে পড়েছে তাই দলটি এমন নকলবাজি করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন খালেদার রূপকল্প বা ভিশন শেখ হাসিনার অনুকরণ, এতে নতুনত্ব কিছু নেই। অন্যদিকে বিএনপির এ ভিশনকে ধাপ্পাবাজি বলে আখ্যায়িত করেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়া ব্রিফিং করে যে ভিশন উপস্থাপন করেছেন, এটা মেধাহীন, অন্তঃসারশূন্য, দ্বিচারিতা, অসাড় প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের ভিশন হলো হাওয়া ভবন গড়া, দুর্নীতি করা আর এতিমের টাকা মেরে খাওয়া। যে ভিশন ঘোষণা করেছেন তা আওয়ামী লীগের নকল। ভিশন নকল করে বিএনপি তাদের মেধাহীনতার পরিচয় দিয়েছে। তাদের মিশন যুদ্ধাপরাধীকে রক্ষা করা।
তোফায়েল আহমেদ বিএনপির ভিশন ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, খালেদা জিয়ার রূপকল্প ঘোষণা শেখ হাসিনার অনুকরণ। ক্ষমতায় গেলে কীভাবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবেন, তা সবিস্তারে তুলে ধরেন খালেদা।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘ভিশন ২০৩০’ কে ধাপ্পাবাজি বলে আখ্যায়িত করেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। বিএনপি যে রাজনীতি করছে সেটা স্টান্টবাজি। তিনি (খালেদা) যে রূপকল্প ঘোষণা করবেন, সেটা এক ধরনের ধাপ্পাবাজি। এই স্টান্টবাজি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ক্ষমতায় যাওয়ার যে স্বপ্ন দেখছেন, সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থাকবে, কোনো দিনও তা পূরণ হবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বিএনপির ভিশন কোনও পথ দেখাবে বলে জনগণ মনে করে না। ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপির ভিশন যখন ঘোষণা করা হলো দেখা গেল, জনগণের মধ্যে ভিশন নিয়ে কোনও জাগরণ তৈরি হয়নি। ফলে আওয়ামী লীগের ভেতরেও এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া বা চাপের কোনও কারণ নাই। মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ভিশন ঘোষণার আগে সবার ভেতরে কিছুটা হলেও আগ্রহ ছিল । কিন্তু ঘোষণার পরে সেই আগ্রহও আর নাই। কারণ, তাদের ঘোষিত ভিশন নকল। কোনও নতুনত্ব নেই। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যারা সরকারের সমালোচক তারাও বিএনপির ভিশন নিয়ে বলেছেন, এতে কোনও নতুনত্ব নাই।
বিএনপির কাছে রেইনবো নেশনের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, আমরা আগামীতে কী ধরণের জাতি গঠন করবো সেটা ঠিক করেছি। আমরা চাই আগামী দিনে, এমন জাতি গঠন করা হবে যেখানে বিএনপি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটাতে চায়। জাতির সকল অংশ তথা ধর্মীয়, আঞ্চলিক ও নৃ-গোষ্ঠীগত পরিচয় এবং নারী পুরুষ নির্বিশেষে সব শ্রেণী ও গোষ্ঠীর মানুষকে নিয়ে একটি সুসংহত জাতি গঠন করাই বিএনপি’র লক্ষ্য।
তাছাড়া জনগণের বৃহত্তর সম্মিলনের মাধ্যমে ‘ইনক্লুসিভ সোসাইটি’ গড়ে তোলার মহৎ লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়াই বিএনপি’র নীতি। এ জন্য প্রয়োজন হবে সকল প্রকার বৈষম্য ও ভেদবুদ্ধির (ডিসক্রিমিনেশন) বেড়াজালকে অতিক্রম করে দেশ গঠনে সবার কর্মপ্রয়াসকে কাজে লাগানো।
বিএনপি চায় বিভক্ত হয়ে পড়া এ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে। তাই সকল মতাদর্শের ঐকতান রচনার জন্য অব্যাহত আলোচনা, মতবিনিময় এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার সেতুবন্ধ রচনাই হবে বিএনপি’র প্রয়াস। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। এজন্য নতুন এক সামাজিক চুক্তিতে (স্যোশাল কন্ট্রাক্ট) পৌঁছাতে বিএনপি সচেষ্ট হবে।
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করছে। সবাইকে নিয়ে কাজ করছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখেছে। বিএনপি যে জাতি গঠন করতে চেয়েছে সেখানে তারা তাদের মতো করে বলেছে। সেটা তারা বলতে পারে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রেইবো শ্যাডো নেশন একটি দারুণ বিষয়। এটা যদি আগামী দিনে বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে সেটা খুব ভাল হবে। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য ভাল হবে। এছাড়াও আমি মনে করি বিএনপি যদি রংধুন জাতি করতে চায় তাহলে বিষয়টি এমন হবে সব বর্ণের মানুষকে তারা এক ছাতার নীচে আনতে হবে। এটা করতে পারলে বিভাজনও অনেক কমবে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় বিএনপি আগামী দিনে এমন সংসদ করবে যেখানে বিভিন্ন ধর্মের ও বর্ণের মানুষের জন্য আলাদা সিটও বরাদ্দ রাখতে পারে। সেটাও একটি ভাল দিক হবে। সব মতের ও সব ধর্মের মানুষ সংসদে থাকলে আগামী দিনে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হানাহানি ও বিভেদ কমে আসবে। এছাড়াও রেইনবো শ্যাডো নেশন করতে হলে আরও অন্যান্য দিকেও নজর দিতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আসলে আমাদের রেইনবো নেশন নিয়ে আওয়ামী লীগ যে মন্তব্য করছে তা সত্যি দু:খজনক। রেইনবো হচ্ছে সব রঙের সমাহার। রংধনু হয় সব রঙ্গ মিলেই যার মূল রঙ সাদা। তাই আমাদের লক্ষ্য সব রঙ্ থাকলেও এর একটি হবে মূল রঙ সাদা। সেইভাবেই আমরা কাজ করবো। যা করবো স্বচ্ছ ও সঠিক ভাবেই করবো।
তিনি বলেন, আমরা যদি সব রঙের সমন্বয়ে একটি রংধনু জাতি করতে পারি তাহলে দেশের উন্নতি হবে দ্রুত। আমরা আগামী ১৩ বছরের মধ্যে মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে ৫০০০-এ উন্নীত করতে পারবো। ১৪০০ ডলার থেকে ৫০০০ ডলার উন্নীত করার জন্য সবাইকে এক হতে হবে। দেশের উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভিশন- ২০৩০ ঘোষণা হতেই আওয়ামী লীগ নেতারা এটা অন্তঃসার শূন্য, ফাঁপা বেলুন। বিএনপি তাদের অনুকরণ করেছে। কিন্তু বিএনপির দর্শন অনুকরণ করে আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক দর্শন, কর্মসূচি পরিবর্তন করেছে। আমরা তাদেরকে কোন অনুকরণ করিনি। যেভাবেই হোক তারা (আওয়ামী লীগ) রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে আছে।তাদের কাছে গঠনমূলক সমালোচনা শুনতে চাই। আমরা যে সব কথা বলেছি তারা বিষয়গুলো নিয়ে পর্যালোচনা করলে ও গঠন মূলক সমালোচনা করলে বিষয়গুলো আমাদের জন্যও সুবিধা হবে। তা না করে না বোঝার ভান করলে সেটা দু:খজনক।