গণপরিবহনে নৈরাজ্য : সমাধান কী?
অ্যাড. তৈমূর আলম খন্দকার
প্রতি ৬ মাস অন্তর চালকদের মেডিকেল ঈযববশ টঢ় করা দরকার। কিন্তু মালিক বা সরকার পক্ষ থেকে তাদের ঈযববশ টঢ় এর কোনো ব্যবস্থা নেই। পেশাদার ড্রাইভিং করার জন্য একটি বয়স নির্ধারণ করে অইন করা দরকার। ভারি কাজ করার জন্য বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৩। একই চালক কর্তৃক একাধারে যাত্রাতিরিক্ত সময় গাড়ি চালানো: দূরপাল্লার গাড়িগুলোর ১% বিআরটিসির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যক্তিমালিকানায় রয়েছে ৯৯% পরিবহন ব্যবসা যা নিয়ন্ত্রণ করে বেসরকারি মালিকপক্ষ। ব্যক্তি মালিকানা গাড়ির ড্রাইভারদের চাকরির কোনো নিরাপত্তা নেই এবং সরকার থেকে কোনো চধু ঝপধষব নির্ধারণ করে দেয়নি। একজন ড্রাইভার দিনে বা রাত্রে কত ঘণ্টা ড্রাইভ করবে বা কতটুকু দূরত্ব (খঙঘএ জঙটঞঊ) পর্যন্ত ড্রাইভ করবে তাহাও সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম বা ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সে ড্রাইভার আপ অ্যান্ড ডাউন করে তার পক্ষে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়া একটা গাড়ি চালানো কোনো কারণেই নিরাপদ নয়। কারণ শরীরের উপর কারও হাত থাকে না। ড্রাইভিং শুধু শারীরিক পরিশ্রমের বিষয় নয়, এটা মানসিক ও বুদ্ধিমত্তার বিষয়। সে হিসেবে শরীরের জোরে বিনা বিশ্রামে মাত্রাতিরিক্ত ড্রাইভিং যুক্তিসঙ্গত নহে। চালকগণ নিজের শরীরের উপর যখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তখন দুর্ঘটনা ঘটে। ৪। ক্রটিপূর্ণ যানবাহন চালানো: গাড়ির মালিকগণ সঠিকভাবে গাড়ি গধরহঃধরহ করে না। বিআরটিএ থেকে ঘুষের বিনিময়ে ঋরঃঃহবংং সার্টিফিকেট নিয়ে গাড়ি রাস্তায় চালনা করে। তাছাড়া অর্থের বিনিময়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট জোগাড় করা কোনো কঠিন সমস্যা নয়। ক্রটিপূর্ণ গাড়ির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেলে দূর্ঘটনায় পতিত হয়।
৫। গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে মালিকদের উদাসীনতা: একটি বাস ক্রয় করার পর মালিক মনে করে যে, বাসটি একটি গড়হবু ঊধৎহরহম গধপযরহব হিসেবে ব্যবহৃত হবে এবং সে চিন্তাধারা থেকেই গধরহঃধরহধহপব করার জন্য অর্থ খরচ করতে চায় না যতক্ষণ না পর্যন্ত গাড়িটি বিকল হয়ে যায়। বিআরটিসির চেয়ারম্যান হিসেবে উন্নতমানের ইঁং ঝবৎারপব সকল রাষ্ট্রে রয়েছে যেমনÑ সিঙ্গাপুর, ব্রিটেন, কলম্বিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ইঁং ঝবৎারপব ঈড়ৎঢ়ড়ৎধঃরড়হ এবং উবঢ়ড়ঃ গুলো সরেজমিনে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সেখানে দেখেছি যে, তাদের ইঁং ঝবৎারপব থেকে উপার্জনের একটি অংশ বাধ্যতামূলকভাবে ইঁং নিয়মিত গধরহঃধহপব এর জন্য রেখে দেওয়া হয়, যা শুধু গধরহঃধহপব কাজে খরচ হয়ে থাকে। বিআরটিসির গাড়ি গধরহঃধহপব করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ব্যাপক দুর্নীতি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন মালিকরা ব্যাংক লোন পরিশোধসহ অধিক মূনাফার জন্য গধরহঃধহপব এর জন্য প্রয়োজনীয় খরচ করতে উৎসাহবোধ করে না। চলন্ত অবস্থায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার এটাও একটি কারণ। ৬। রোড ম্যানেজমেন্টে কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতা: বাংলাদেশে এক ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে অন্য ডিপার্টমেন্টের কাজের কোনো সমন্বয় নেই। যেমন সিটি কর্পোরেশন রাস্তা মেরামত করায় পরের দিনই ওয়াসা বা টিন্ডটি তাদের প্রয়োজনে রাস্তা কাটাশুরু করে। ইতোপূর্বে গবেষণামূলক তথ্যাদিতে দেখা যায় যে, বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকিপূর্ণ স্থান নির্ধারণ করা হলে সুপারিশ মোতাবেক তা এখনো প্রস্তাব মোতাবেক সংশোধন করা হয়নি। ঢাকা মহানগরীতে ঙাবৎ ইৎরফমব গুলো সম্পূর্ণরূপে চালু হলে যানজটের বিষয়টি মাথায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে কিনা তা বোঝা যাবে। ঙাবৎ ইৎরফমব, ঋষু ড়াবৎ সহ বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে জনসংখ্যা ও প্রাইভেটকারের আধিক্যের কারণে ‘যানজট’ সাধারণ পদক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান হবে না। কলম্বিয়ার রাজধানী বোগটা শহরে ২০০৫ সালে গণপরিবহন মেনেজমেন্টের উপর ট্রেনিং নেওয়ার সময় লক্ষ্য করেছি যে, সপ্তাহের যেকোনো একদিন সে রাজধানীতে গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে সাইকেল চালানোর জন্য খুলে দেওয়া হয়। ফলে সপ্তাহে অতন্ত একটি দিন ব্যস্ততম এলাকায় মানুষ যানজট মুক্ত থাকে এবং মানুষের দিন যাপনে একটি অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটে যা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত। পরিকল্পনা করার জন্যও অনেক অর্থের ব্যয় হয়, এক সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করলে পরবর্তী সরকার তা বাস্তবায়ন করে না, বরং বাঁকা চোখে দেখে। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের জন্য অনেক পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে, যার পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, কিন্তু সরকার পরিবর্তনের কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। এক সরকারের প্রতি অন্য সরকারের বিদ্বেষমূলক আচরণ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের অন্তরায়। মানসিকতা পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয় রাষ্ট্রীয় স্বার্থে।
৭। রাস্তায় চলাচলে যাত্রীদের অসচেনতা: আমাদের দেশের যাত্রীদের অসচেতনার কারণেও দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। যাত্রীরা রাস্তা ব্যবহার ও পারাপারে সাংকেতিক নিয়ম মেনে চলে না। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও যাত্রীরা গাড়িতে চলার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে যাত্রীদের অসাবধানতা, দায়িত্বহীনতার কারণেও দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। ৮। দুর্ঘটনায় কবলিত যাত্রীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা অপ্রতুল: দুর্ঘটনায় পতিত মানুষ তাৎক্ষণিক চিকিৎসার অভাবে রক্তক্ষণনে বা অন্যকোনো কারণে মৃত্যুবরণ করে। ঐরময ডধু চড়ষরপব চবঃৎড়ষ ঞবধস থাকলে আমাদের দেশে ঞজঙগঅ ঈঊঘঞজঊ বা ঐওএঐ ডঅণ অগইটখঅঘঈঊ ঞঊঅগ সরকার চালু করেনি। নিজস্ব অর্থায়নে বিআরটিসি ২০০৫ সালে মাইক্রোবাস মোডিফাই করে বিআরটিসি ১৬টি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে একটি ঐওএঐ ডঅণ অগইটখঅঘঈঊ ঝঊজঠওঈঊ চালু করেছিল বটে, কিন্তু তাহাও এখন অস্তিত্ব বিলোপ হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে বেসরকারি পরিবহন মালিকদের ঐওএঐ ডঅণ অগইটখঅঘঈঊ ঝঊজঠওঈঊ চালু করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশে মহামারী আকার ধারণ করেছে। এ নিরসনে বাস্তবমুখী পরিকল্পনার চেয়ে রাজনৈতিক বক্তব্যই বেশি দেওয়া হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনাকে ‘জাতীয় সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করে এর সমাধানে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি পূর্ববর্তী সরকার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে তা পরিহার করা বাঞ্ছনীয় নহে। (শেষ)
লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন, এবং গণপরিবহন পরিচালনায় উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
ঃধরসঁৎধষধসশযধহফধশবৎ@মসধরষ.পড়স
সম্পাদনা: আশিক রহমান