সাঈদীর আমৃত্যু জেল এবং সময়ের বিচার
অজয় দাশগুপ্ত
প্রধান বিচারপতি তার সিডনি সফরের সময় ইঙ্গিত দিয়ে গেছিলেন সাঈদীর মৃত্যুদ- প্রাপ্তি অনিশ্চিত। তার বড় গুণ তিনি স্পষ্টভাষী। এটা বিপদও টেনে আনে বৈকি। তবে এটা মানতে হবে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে ফাঁসিতে চড়ানো সহজ কিছু না। এস কে সিনহা কতিপয় অভিযোগও করেছেন। আমি আপনি কি সেগুলো অস্বীকার করতে পারি? প্রসিকিউটার নিরপেক্ষ থাকবেন এটাই তো স্বাভাবিক। আপনি কাউকে ৪০ বছর পর শিকড় থেকে টেনে তুলবেন অথচ নিয়ম মানবেন না, এটা কোন ধরনের যুক্তি?
একাত্তরকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে অতীতের ঝাপসা কিছু করে রাখবেন কোন কারণে? তার ইতিহাস ও পরম্পরা সবাই মিলে বিনষ্ট করেছে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যে আশা ও প্রত্যাশা জাগিয়ে শুরু করেছিল রাজনীতি তাকে গিলে খেয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে বিচার বা শাস্তি কোনোটাই হতো না। বিশেষত শেখ হাসিনার কঠোর মনোভাব না থাকলে কবেই সবকিছু গুবলেট হয়ে যেত। এটা নির্মূল কমিটি জানে বলে লীগের ভেতর ঘাপটি মারা বড় ছোট যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে কিছু বলে না। বুঝলাম কৌশল, কিন্তু বিচার বা বিচারক কেন রাজনীতির অপকৌশল বুঝতে যাবেন?
এখন এমন হাল শাহবাগও আর জীবন্ত নেই। যদি প্রশ্ন করি কেন এমন হলো? এর জবাব কি আমাদের অজানা? এক সরকার প্রচ্ছন্ন আরেক সরকার গৃহপালিত। এভাবে কি আসলে ফাঁসি ফাঁসি করে জীবন যায় কোনো জাতির? যে মানুষগুলো অনেক স্বপ্ন অনেক আশা ও চেতনা নিয়ে এসেছিলেন তারা এখন হতাশ। জামায়াত গেল তো কি হলো? উঠে এসেছে হেফাজত। এক কথা এক সুর একই মৌলবাদ। তারা যদি দোস্ত হয়তো জামায়াতের কি কসুর? আজ তাই দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর আমৃত্যু জেল আমার মতো অনেকের কাছে হয় আপস নয়তো নিয়তি। একটা কথা মানতেই হবে, বিচার মনমতো না হলে রাগারাগি আর ফাঁসি হলে বিজয় মিছিল, এটাও কি কোনো ন্যায্য কথা?
সময় কখন কি করে কেন করে তার জবাব বা বিচার মানুষের হাতে নেই। সাঈদীর এই আমৃত্যু জেল কি কারণে কেন হলো এবং এর পেছনে সময় কি রহস্য জমা করে রেখেছে সরকার তো কোনো ছাড় প্রকৃতি বা নিয়তি ছাড়া কেউই বলতে পারে না। বাংলাদেশ সবসময় এ জাতীয় ঘটনাকে তার নিজের মতো করে জবাব দিয়েছে। সেটাই শেষ ভরসা। তবে এটা মানতেই হবে সাঈদীর ইমেজ সরকারের চেয়েও শক্তিশালী। সেটাই প্রমাণিত হলো আরও একবার।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক