স্বপ্নের বাংলাদেশ নির্মাতার অঙ্গীকারে ফিরে আসা
ফরিদুন্নাহার লাইলী
১৭ মে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নিজ দেশে ফিরে আসার দিন। আজ থেকে ৩৬ বছর আগে ১৯৮১ সালের এই দিনেই তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন একটি স্বপ্নের বাংলাদেশের নির্মাতা হবার অঙ্গীকার নিয়ে। সপরিবারে পিতার মৃত্যুর পর প্রবাসজীবন বাধ্যতামূলক হয়ে যায় শেখ হাসিনার জন্য। একদিকে দেশে আসতে না পারা, অন্যদিকে জীবনের প্রতি হুমকি। সব মিলিয়ে দুঃসহ জীবনের মধ্যে বেঁচে থাকা। এরই মধ্যে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সেই দায়িত্বভার গ্রহণ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জীবন নিয়ে সকল শংকাকে তুচ্ছ করে নিজ দেশে তিনি ফিরে আসেন।
বঙ্গবন্ধুর দেশে ফিরে আসাটি আমাদের ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছে। যার ফলে কম বেশি অনেকের সেই ঘটনা জানার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এখনো সাধারণের জানার বাহিরে আছে। অথচ এই ফিরে আসাটিও আমাদের জাতীয় জীবনের জন্যে বিশাল গুরুত্ব বহন করে। কারণ শেখ হাসিনা ফিরে এসেছেন বলে এদেশের মানুষ ‘ভোট ও ভাতের অধিকার’ ফিরিয়ে পেয়েছে। গণতন্ত্র ফিরে পাবার জন্য আন্দোলন সংগ্রামের ফলে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক দেশে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকা সেনাশাসককে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। শেখ হাসিনা ফিরে এসেছেন বলেই ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পেয়েছে। গেল বছর বাংলাদেশ সফরে এসে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু মন্তব্য করেছেন, ‘এশিয়ার উদীয়মান বাঘ বাংলাদেশ।’
১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। কোনো রাজনৈতিক বচন নয়, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সেই সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুণগত একটি পরিবর্তন আসে। ২০০১-এ বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশের ইতিহাসে কলংকজনক আরেকটি ইতিহাসের জন্ম দিলেন। গাড়িতে লাল সবুজের পতাকা ব্যবহারের দায়িত্ব অর্পণ করলেন সেই তাদের যারা এদেশের স্বাধীনতায় বিরোধিতা করেছিল; ৩০ লাখ শহীদের রক্তে যাদের হাত রঞ্জিত হয়েছিল। দেশের পুরনো শত্রু জামায়াত নিজেদেরকে ক্ষমতায় পোক্ত করার জন্য দেশকে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার মানসে দেশেব্যাপী জঙ্গি চাষাবাদ শুরু করে। সেই প্রমাণগুলো সবার সামনে স্পষ্ট। এদেশে বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমান নামক জঙ্গি নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী একইদিন একই সময়ে ৫০০ বোমা হামলা করে নিজেদের শক্ত অবস্থান তারা জানান দিয়েছিল। অন্যদিকে দেশের তরুণ প্রজন্ম স্বাধীনতা বিরোধীদের রাষ্ট্র পরিচালনায় দেখে মেনে নিতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করা শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবী সমাজ তারাও প্রতিবাদমুখর হয় যুদ্ধাপরাধীরা যাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব থেকে বিতাড়িত হয়। কারণ তারা স্পষ্টই বুঝতে পেরেছেন দেশকে সেই চক্র একটি অন্ধকার গলিতে নিয়ে যাচ্ছে। সময় থাকতে সেখান থেকে বের হতে না পারলে পরবর্তীতে দেশ সঠিক পথে ফিরে আসতে অনেক বেগ পেতে হবে। জনগণের এই প্রত্যাশাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মেনডেট দিয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পান আওয়ামী লীগ। এরপর আরেকটি অগণতান্ত্রিক সরকারের দুই বছরের দেশ শাসনে মূলত দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ধাক্কা লেগেছে। গতিহীন দেশে সার্বিক শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচার করেছেন, দেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার করছেন। দেশের জনগণ বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনা যদি দেশে না আসতেন তাহলে এদের বিচার কোনোদিন কেউ এই মাটিতে করার সাহস পেতেন না, শেখ হাসিনা বলেই পেরেছেন; আর বিচার না হলে এই বীরের জাতিকে ইতিহাসে কলংক নিয়েই বেঁচে থাকতে হতো। এই বিশ্বাসটি সেই অপরাধী চক্রেরও; তাই তো তারা প্রথমেই চায়নি শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসুক। আর যখন ফিরে এসেছেন তখন ওই ভয় তাদের তাড়া করে; যার ফলশ্রুতিতে তারা শেখ হাসিনাকে অসংখ্যবার হত্যার চেষ্টা করেছেন। ২০০৮-এর জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের নির্বাচনি মেনডেট ছিল তারুণ্যের একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া। সেই রূপকল্প বাস্তবায়ন রাজনৈতিক কোনো কথার ফুলঝুরি নয়; আজ তা প্রমাণিত সত্য। ডিজিটালের সুফল ভোগ করছে দেশের জনগণ। হাতের মুঠোয় এখন সবকিছু। বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং-এ দৈনিক লেনদেন হচ্ছে ৮০০ কোটি টাকারও বেশি। মাথাপিছু আয় এখন ১৬০২ ডলার; জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.২৪ শতাংশ। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে তার ভিশন সফলতার দিকে অতিক্রম করছে সেই ইঙ্গিত আমরা ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছি। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এই তথ্য জেনে দৃঢ় নেতৃত্বের অধিকারী শেখ হাসিনা প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, তার দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তিনি দেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে পারবেন। এই অঙ্গীকার রক্তেরই ধারাবাহিকতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের দৃঢ়তায় এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর তার কন্যার নেতৃত্বের দৃঢ়তায় পরিবর্তন আসবে দেশ। আমাদের এই স্বপ্ন, বিশ্বাস এবং এতটুকু যে অর্জন তা কেবল শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছেন বলেই সম্ভব হয়েছে।
শেষে এইটুকু বলব, ধন্য আমরা দেশের জনগণ, শেখ হাসিনা আপনাকে পেয়ে সবুজ শ্যামল এই বাংলায়। সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকুন সুদীর্ঘকাল, আমাদের জন্যে, দেশের জন্যে।
লেখক: কৃষি ও সমবায় সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সাবেক সংসদ সদস্য
সম্পাদনা: আশিক রহমান