সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ৩৬ ভাগ ব্যাংক
আরিফুর রহমান তুহিন : সাইবার (আইটি) নিরাপত্তা ঝুঁকিতে দেশের ৩৬ শতাংশ ব্যাংক। তারচেয়েও বড় কথা ব্যাংকিং খাতের ৫০ভাগ কর্মকর্তাই সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে অজ্ঞ। গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার বলেন, এই তথ্যটি দেশের ব্যাংকিং ক্ষাতের জন্য ভয়ংকর। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের হ্যাকিংয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, শত কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে সফটওয়ার আনতে পারে আর জনবল আনতে পারে না এমনটা হতে পারে না। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে পরবর্তিতে আবার কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে এর দায় কেউ এড়াতে পারবে না।
বিআইবিএমএ বাংলাদেশের সরকারি- বেসরকারি ২১ টি ব্যাংকে কর্মরত ৫০০ কর্মকর্তার কাছ থেকে নেয়া তথ্য অনুযায়ী এই প্রতিবেদন তৈরী করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের মাত্র ১০% ব্যাংক আইটি নিরাপত্তায় সচেষ্ট হয়েছে। দেশের প্রায় ৬০% প্রতিষ্ঠান আইটি সেক্টরকে অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে মনে করেন। ৬৮% ব্যাংক পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইড লাইনের উপর নির্ভর করে আসছে। ৯০% ব্যাংক কর্মকর্তা দেশে সাইবার ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন। দেশের ব্যাংকগুলোতে আইটি নিরাপত্তা সম্পর্কে খুবই ভালো ধারণা রয়েছে ৪ শতাংশ, ভালো ধারণা ১০ শতাংশ এবং মোটামুটি ধারণা রয়েছে ১৬ শতাংশ ব্যাংক কর্মকর্তার। বাংলাদেশের মোট ৫৭ টি ব্যাংকে প্রায় ২ লাখ কর্মকর্তা রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতের তথ্য নিরাপত্তা বাধায় কিছু কারণ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অজ্ঞতার অভাব, গ্রাহকদের অসচেতনা, ব্যাংকগুলোর বাইরের আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর অতি নির্ভরশীলতা, ব্যাংকিং খাতে আইটি এক্সপার্টের অভাব, প্রশিক্ষণ না থাকা এবং বাজেটের স্বল্পতা । গ্রাহকদের মধ্যেও একই জরিপ চালিয়েছে বিআইবিএম। এতে দেখা গেছে, ৫৪ শতাংশ গ্রাহক সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে অজ্ঞ।
বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, সম্প্রতি পৃথিবীব্যাপি ব্যাংক হ্যাকিংয়ের শিকার হচ্ছে তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। তিনি দেশের ৭/৮ টি প্রতিষ্ঠান সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানতো হ্যাকারদের ৩০০ ডলার প্রদান করেও তাদের ওয়েবসাইটটি উদ্ধার করতে পারেনি। এখনও আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফায়ার ম্যানকে দিয়ে সার্ভারের সুইচ অন অফ করায়। আইটি সেক্টরে কর্মরত ৪০% কর্মী তাদের চাকরির ব্যাপারে খুশী নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইটি সেক্টরে বিশাল অংকের বাজেট থাকলেও আমাদের দেশে খুবই সামান্য। অথচ অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো কম খরচে অধিক পরিমাণ মুনাফা অর্জন করছে। দেশের ৯১% ব্যাংক মনে করে তাদের জন্য আইটি সেক্টরে একটি আলাদা সেল দরকার। যদিও এখন পর্যন্ত এর কার্যকারিতা নেই। দেশের ওয়েবসাইটগুলোতে প্রতিদিন ৭৬-৫১৯ টি হামলা হয়। হামলাকারীরা রাশিয়া, বুলগেরীয়া, হংকং, তাইওয়ানসহ কিছু দেশের হ্যাকার বলে জানা যায়।
দেশের ব্যাংকিং নিরাপত্তা খাতে যখন এমন সমস্যা তখন এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর বলেন, সাইবার নিরাপত্তার জন্য গত কয়েক বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিবছর আইটি নিরাপত্তায় রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ আরও ১৫০০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। দেশের ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী নিরাপত্তার মানে পৌছাতে পারেনি। এ কারণে ব্যাংকিং খাতে সাইবার ঝুঁকি রয়েছে।আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর সাইবার আক্রমণ প্রায়ই ঘটছে এবং সেগুলো খুব বড় ধরণের ও জটিল। আর্থিক খাতের পুরো সিস্টেমটাকে নষ্ট করে ফেলেছে। এই অপরাধীরা সাইবার আক্রমণ করে বড় অংকের তহবিল হাতিয়ে নিচ্ছে। এটিএম জালিয়াতির মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার কারণ হিসেবে তিনি উন্নতমানের সফটওয়ার না থাকা, মানসম্পন্ন জনবলের অভাব, দীর্ঘ মেয়াদের পরিকল্পনার অভাব, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা এবং এই সেক্টরে বাজেটের ঘাটতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এর থেকে উন্নতি করতে হলে অবশ্যই আইটি নিরাপত্তাখাতে বাজেট বাড়াতে হবে।
প্রতিবেদনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক দেবদুলাল রায় বলেন, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে গাইডলাইনে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হবে। আইটি নিরাপত্তা জোরদারে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। দেশে আইটি সেক্টরে পর্যাপ্ত যোগ্য লোক নাই বলে জানান তিনি। এমনকি প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য লোক তৈরী করারমতো মনমানসীকতার জনবলের অভাব রয়েছে বলে মনে করেন এই প্রযুক্তিবিদ। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত