ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা থেকেই জঙ্গিরা আত্মঘাতী হচ্ছে
মে. জে. (অব.) আব্দুর রশীদ
একজন মানুষ কখন আত্মঘাতী প্রবণ হয়ে উঠে, যার মধ্যে ধর্মান্ধতা থাকে। জঙ্গিদের আত্মঘাতী প্রবণতার বড় একটি কারণ। আত্মঘাতী জঙ্গিদের পেছনে তাদের নেতা থাকে। বড় মাপের নেতার উপিস্থিতি থাকে। যখন সেখানে একজন নেতা থাকে তখন সে অন্য সবাইকে উৎসাহিত করে আত্মঘাতী হওয়ার জন্য। আরেকভাবে যদি বলি, সেটি হচ্ছে যে ওদের ভেতর থেকে, পরিবারসহ আত্মঘাতী হতে আমরা দেখছি। তারা মনে করছে, পরিবার তার সঙ্গে থাকার ফলে তার অনেক তথ্যই পরিবারের কাছে চলে গেছে, এখন তারা যদি পরবর্তীতে এই তথ্যগুলো ফাঁস করে তাহলে তাদের সংগঠনের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। এই ধারণাটা কাজ করে তাদের মনের মধ্যে। সেই কারণে তাদের নেতারা আত্মঘাতী ঘটনা ঘটানোর উৎসাহ দেয়।
আমরা এ পর্যন্ত যতগুলো ঘটনা দেখেছি এবং সর্বশেষ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতেও দেখলাম একই ঘটনা ঘটেছে। সেখানে আশরাফুল নামের যে বড় একজন নেতা ছিল এবং সে সবাইকে নিয়ে আত্মঘাতী হতে পেরেছে। এছাড়া এই আত্মঘাতী হওয়ার পেছনে মোটিভেশন আছে। সবাই তো আর আত্মঘাতী হতে চায় না, এর পেছনে যারা শক্তিশালী বা বড় নেতা থাকেন তারাই এটাকে উৎসাহিত করেন এবং এটি সংগঠিত করেন। তার আশেপাশে যাদের নিয়ে চলাফেরা করছে পরিবার বলুন বা যাদের নিয়ে সে থাকতো তাদেরকে নিয়েই সে আত্মঘাতী হয়েছে। এটিই আসলে আত্মঘাতী হওয়ার মূল কারণ। যারা এই কর্মকা-গুলো করছে তাদের একটা আদর্শ আছে। ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা থেকেই জঙ্গিরা আত্মঘাতী হচ্ছে।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, তারা এক ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। স্বভাবতই এই আদর্শগতভাবেই ধর্ম বা জিহাদ সম্পর্কে খ-িত ব্যাখ্যা দিয়ে কাউকে কাউকে প্রভাবিত করা হচ্ছে। এ বিষয়গুলো জনগণকে যতবেশি অবগত করা যাবে, তাহলে তারা আর ওই বিপথে যাবে না। দ্বিতীয় হচ্ছে. তাদেরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছে তাদের চিহ্নিত করে এই পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করলে তাদের মধ্যে যতটাই ধর্মভীতি থাক না কেন, সেটি দূর হয়ে যাবে। সমাজের সর্বস্তরেই সচেতনতা নিয়ে আসতে হবে। দেখা গেছে তারা যেখানেই থাকছে, সমাজের মানুষ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে থাকছে, ঘটনাগুলো ঘটনার পর আশেপাশের মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করলে তারা তাদের আস্তানা বা অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারে না বা কোনোকিছু অনুভব করতে পারে না। তারা অনেকটা জনবিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে। জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে মানুষকে যতবেশি অবগত করা যাবে ততবেশি এই বিপথ থেকে মানুুষ সরে আসবে। এ ছাড়াও তাদের কিছু প্রচার প্রচারণা আছে। খুব প্রশিক্ষিতভাবে, কৌশলগতভাবে তারা নতুনদেরকে প্রশিক্ষিত করে। এসব কৌশল যে তারা ব্যবহার করে এগুলোকে পরাজিত করতে হবে। যাতে তারা এসব ব্যবহার করতে না পারে।
যেমন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক যদি এই মতাদর্শ ছড়ায় বা এই মতাদর্শ ছড়ানোর জন্য নিজেকে নিয়োগ করে তাহলে সেখানে ভাল সাফল্য লাভ করতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এ ধরনের মতাদর্শ প্রচারকারী তারা যদি মানুষের কাছে ধর্মের আড়ালেই হোক বা অন্য রাজনৈতিক আড়ালেই হোক তারা তাদের কাছে যাচ্ছে এই পথগুলো বন্ধ করলে তখন সাধারণ মানুষের কাছে তাদের এই আদর্শ ছড়িয়ে দিতে পারছে না। আমরা মসজিদে দেখেছি, মাদ্রাসায় দেখেছি, স্কুলে দেখেছি। প্রায় সব জায়গায় দেখেছি। এখানে নজরদারির একটা প্রয়োজন আছে, যাতে সামাজিক একটা প্রতিরোধ জঙ্গি বা আত্মঘাতী মতাদর্শ যেই ছড়াতে যাবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।
পরিচিতি: নিরাপত্তা বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি/সম্পাদনা: আশিক রহমান