ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই মুমূর্ষু
শাহজালাল ভূঞা: ছাগলনাইয়া উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনটি জরাজীর্ণ, ডাক্তার-কর্মচারি সংকট, পানি ও জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। হাসপাতালের এক্স-রে রুমে রোগীর ওপর ছাদ ভেঙে পড়ার আশংকায় এক্স-রে মেশিন বন্ধ করে দীর্ঘদিন ধরে তালা ঝুলিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। দুই বছর না পেরোতেই সাড়ে ১৮লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপিত পানির পাম্পটি পরিত্যক্ত। ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেশিরভাগ শূন্য হলেও ডাক্তারদের অনেকে প্রেষণে অন্যত্র চাকরি করছেন। সবমিলিয়ে ডাক্তার শূণ্যতা, পানির সংকট, অকেজো এক্স-রে মেশিনসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ।
জানা গেছে, ফেনীর সীমান্তবর্তী ছাগলনাইয়া উপজেলার সাড়ে তিন লাখ মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এর মধ্যে গরীব ও দুস্থ মানুষদের বেশিরভাগই চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন ওই হাসপাতালে। যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার কারণে ঐতিহাসিকভাবে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির রামগড়, চট্টগ্রাম জেলার উত্তর ফটিকছড়ি, মিরসরাই উত্তরাঞ্চল, পাশ্ববর্তী ফুলগাজী উপজেলাবাসীর একটি অংশ ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন । গত মঙ্গলবার রোগীদের অভিযোগে সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন থাকলেও প্রাণহানি এড়াতে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে এক্স-রে কক্ষে। এক্স-রে কক্ষের ছাদ নষ্ট হয়ে ছাদের চুন-সুরকি পলেস্তর খসে খসে নিচে পড়ছে। আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে ভেতরে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা। রোগীর ওপর ছাদ ভেঙ্গে পড়ার ভয়ে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে এক্স-রে কক্ষ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানালেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক্স-রে কক্ষের দায়িত্বে থাকা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেজিওলজি) মাহবুব আলম জানান, এক্স-রে কক্ষ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এক্স-রে মেশিন, র্ডাক রুমের রক্ষিত ফিল্ম, ক্যাসেট ও স্কিনগুলোসহ জিনিসপত্র ও যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে, এক্স-রে মেশিন বন্ধ থাকায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় বঞ্চিত হয়ে রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে বাড়তি টাকা দিয়ে এক্স-রে করাতে হচ্ছে। আবার সার্মথ্যের অভাবে অনেকে এক্স-রে করাতে পারছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতালে নিরবিচ্ছিন্ন বিশুদ্ধ পানি সরবহরাহের উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে ফেনী জেলা পরিষদের অর্থায়নে সাড়ে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৫০ ফিট বোরিংয়ের স্থাপন করা হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় পানির পাম্প মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে কয়েকমাস ধরে। স্থানীয়ভাবে মেরামতের উদ্দেশ্যে গভীর সাবমারসিবল পাম্প মেশিনটির পাইপ তুলে ফেলা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত মেরামত না করলে ফিল্টারের চারপাশে বালি ও মাটি জমে লেয়ার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পরিত্যক্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে পাম্পটি। হাসপাতালের পানি শূণ্যতা দেখা দিলে ডাক্তার নুরুল আমিন জাহাঙ্গীর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় পুরাতন একটি মেশিন সচল করে কোনমতে পানি সরবহরাহের ব্যবস্থা করা হলেও ,স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আন্তঃবিভাগ, বহিঃবিভাগ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবনে নিয়মিত পানি সরবরাহে সংকট রয়েছে।
৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে ডাক্তারসহ জনবল সংকট মারাত্মক রূপ নিয়েছে। নয়জন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে প্রশিক্ষণে দুইজন, প্রেষণে একজন ও দুইটি পদ শূণ্য থাকায় বর্তমানে কর্মরত আছেন চারজন। কনসাল্টেন্ট পদে ১০ জনের মধ্যে ডা: আজিজ উল্লাহ ( সার্জারী) ও ডা: বজ্রগোপাল ( চক্ষু), ডা. মোজাম্মেল হক প্রেষণে ও শূন্য পদ মিলে সাতটি পদেই ডাক্তার নেই। এর মধ্যে গাইনি, অর্থোপেডিক সার্জারি, কার্ডিওলোজিস্ট, স্কিন, নাক-কান-গলার ডাক্তার না পেয়ে বাধ্য হয়ে মোটা অংকের ফিস দিয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে। এদিকে অর্থের অভাবে গরীব ও দুস্থরা বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসা সেবা থেকে ।সম্পাদনা: মুরাদ হাসান