ঢাকায় টিকফার বৈঠক অনুষ্ঠিত জিএসপি জট খুলছে না
মেসবাহ উল্লাহ শিমুল : বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা চুক্তির তৃতীয় বৈঠকেও মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকার মূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ফলে সহসাই জিএসপি জট খুলছে না। গতকাল রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ের ওই বৈঠকে অন্য সব বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
টিকফার তৃতীয় বৈঠককে ঘিরে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ছিল। বিশেষ করে এ বৈঠকে জিএসপি পুনরুদ্ধারে ঢাকার পক্ষ থেকে জোর দাবি জানানো হবে এমনটাই জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সে অনুযায়ী তাদের প্রস্তুতিও ছিল। তবে গতকালের ওই বৈঠকে শেষতক এ নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। পরে সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকে বাংলাদেশের ২২ সদস্য বিশিষ্ট দলের প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যসচিব শুভাসীষ বসু সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে বলেন, কোনো পক্ষই জিএসপির বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করেনি। তবে কী কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি বাদ গেল সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি সংবাদ সম্মেলনে।
রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর ১৬টি শর্তে মার্কিন বাজারে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে ওবামা প্রশাসন। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি ইতোমধ্যে প্রায় সবগুলো শর্তই পূরণ করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
এর আগে টিকফার ওই বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে ঢাকার পক্ষ থেকে বেশকিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধিদল সেই প্রস্তাবনাগুলো ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে তাদের ইতিবাচক প্রস্তুতি রয়েছে। তারা তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থা, কারখানায় শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার, কর্মপরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমরা আমাদের দিক থেকে তাদের জানার আগ্রহ মেটাতে পেরেছি।
বৈঠকে অংশ নেওয়া শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় যে বৈপ্লবিক সংস্কার সাধিত হয়েছে সে বিষয়টি মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। তারা আশুলিয়ার শ্রমিক অসন্তোষের সর্বশেষ বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, আমরা জানিয়েছি। সেখানে শ্রমিক নেতাদের নামে যে মামলাগুলো রয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করতে আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলেও তাদের জানিয়েছি আমরা।
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিরা আমাদের জানিয়েছেন দেশটিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে নতুন প্রশাসন ক্ষমতায় এলেও তাদের মুক্ত বাণিজ্য নীতিতে কোনো পরিবর্তন হবে না। তাই ঢাকার সঙ্গে বহুপাক্ষিক সম্পর্ক যেমনটি ছিল তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আমরা তাদের বলেছি বর্তমান বাংলাদেশ এক নতুন বাংলাদেশ। এখন এখানে নতুন প্রজন্ম নব উদ্যমে দেশের উন্নয়নে কাজ করছে। বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগ সম্ভাবনার উর্বর ভূমি। আমরা তাদের কাছে আগামী ২০ বছর পরের দেশের অর্থনীতির প্রকৃতি কেমন হবে তার একটা ধারণা তুলে ধরেছি। তারা আমাদের কথায় ভীষণভাবে উৎসাহী বলে মনে হয়েছে।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট জানান, বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের বিষয়টিকে তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বৈঠকে মার্কিন বাণিজ্য সংস্থার প্রতিনিধি মার্ক লিন্সকর্ট দেশটির ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী