কোন পীরের হাতে বায়াত হবেন?
মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম
পীর। ফার্সি শব্দ। আরবিতে এটাকে বলা হয় মুরশিদ। অর্থ : পথপ্রদর্শক। অর্থাৎ যিনি আল্লাহর আদেশ নিষেধ, এবং আল্লাহর পছন্দনীয় পন্থায় চলার পথ নির্দেশ করেন। এমনিভাবে মুরিদ শব্দটিও আরবি। অর্থ হল, ইচ্ছাপোষণকারী। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ নিষেধ এবং আল্লাহ তায়ালা যেভাবে চান সেভাবে তার আদেশ-নিষেধ পালন করার ইচ্ছা পোষণ করে কোন হক্কানি বুজুর্গ ব্যক্তির হাত ধরে শপথ করেন। সুতরাং উপরিউক্ত ব্যাখ্যা থেকে একথা স্পষ্ট হলো যে, পীর হবেন শরীয়তের আদেশ নিষেধ পালন করার প্রশিক্ষণদাতা। আর যিনি সে প্রশিক্ষণ নিতে চায় সে শিক্ষার্থীর নাম হল ‘মুরিদ’।
তাই যে ব্যক্তি নিজেই শরীয়তের বিধান অমান্য করে, নামাজ পড়ে না, পর্দা করে না, সতর ঢেকে রাখে না বা শরিয়তের আবশ্যকীয় কোন বিধি-বিধানই পালন করে না, সে ব্যক্তি কিছুতেই পীর তথা মুর্শীদ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। কারণ স্পষ্ট, যার নিজের মাঝেই শরিয়ত নেই, সে কিভাবে অন্যকে শরিয়তের উপর আমল করা প্রশিক্ষণ দেবে বা দেয়ার অধিকার রাখবে। যেহেতু সে নিজেইতো প্রশিক্ষিত নয়। লক্ষণীয় যে, পীর মুরীদির এ পদ্ধতি রাসুল (সা.) থেকেই চলে আসছে। রাসুল (সা.) সাহাবাদের আল্লাহমুখী হওয়ার প্রশিক্ষণ দিতেন। সাহাবারা রাসুল (সা.) এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতেন। বলা যায়, রাসুল (সা.) হলেন সবচেয়ে প্রথম ও বড় পীর, ও সাহাবায়ে কিরাম হলেন প্রথম মুরিদ। অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় কর, আর সৎকর্মপরায়নশীলদের সাথে থাক। (সুরা তাওবা-১১৯) উপরিউক্ত আয়াতে কারীমায় সুষ্পষ্টভাবে বজুুর্গদের সাহচর্যে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপর আরেক আয়াতে ‘এসেছে যাদের উপর আল্লাহ তাআলা নিয়ামত দিয়েছেন, তারা হল নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহিদগণ, ও নেককার বান্দাগণ। (সূরা নিসা-৬৯) এ তিন আয়াত একথাই প্রমাণ করছে যে, নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দা হলেন নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, আর নেককারগণ, আর তাদের পথই সরল সঠিক তথা সিরাতে মুস্তাকিম।
অর্থাৎ তাদের অনুসরণ করলেই সিরাতে মুস্তাকিমের উপর চলা হয়ে যাবে। হাদিসে পাকে এসেছে, রাসুল সা. বলেন, ‘সৎসঙ্গ আর অসৎ সঙ্গের উদাহরণ হচ্ছে মেশক বহনকারী আর আগুনের পাত্রে ফুঁকদানকারীর মতো। মেশক বহনকারী হয় তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তুমি নিজে কিছু কিনবে। আর যে ব্যক্তি আগুনের পাত্রে ফুঁক দেয় সে হয়তো তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দিবে, অথবা ধোঁয়ার গন্ধ ছাড়া তুমি আর কিছুই পাবে না। (বুখারী, হাদীস নং-৫২১৪, সহিহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৮৬০, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩১৯০, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৮৩১, সহীহ ইবনে হিব্বান) কিন্তু দু:খজনক হলো আজ সেই পীর মুরিদির ক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ি আর ছাড়াছড়ির শেষ নেই। এ ব্যাপারে বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘দারুল উলূম দেওবন্দের’ ইউপি ভারতের-এর শায়খুল হাদিস মাওলানা মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরি দা.বা. আমাদের দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) জামাতে হাদিসের বিশুদ্ধ কিতাব বুখারি শরিফ প্রথম খন্ড পাঠদানের সময় পঠিত পাঠের আলোচনার সূত্রধরে উনার আলোচনার এক পর্যায়ে বলেন, বর্তমান আজকের পীর মুরিদির অবস্থা খুবই নাজেহাল। এক বাক্যে বলা যেতে পারে এখনের পীর মুরিদ মানেই হলো, দোকানদারি। আজকাল এসবের নামে চলছে সর্বত্র রমরমা বিজনেস। সত্যিকারার্থের পীর বা বুজুর্গ পাওয়া আজকাল খুবই দুষ্কর বিষয়। লক্ষণীয় যে, জান্নাতে যাওয়ার কখনো কারো জন্য কারো মুরিদ হওয়া শর্ত নয়, হ্যা!
তবে জান্নাতের উঁচু মর্যাদার অধিকারী হতে হলে অবশ্যই কোনো না কোনো খাঁটি আল্লাহর ওলির কাছে মুরীদ হওয়া যেতে পারে। কিন্তু এখনের কথিত সুন্নি, বেরলভি এবং বেদাতিদের কথা, ‘যেকোনো পীরের কাছে মুরিদ হওয়া ফরজ। যার পীর নেই তার পীর হলো শয়তান’। তাদের এরকম ভ্রান্ত মতবাদের কোন ভিত্তি নেই। এসব কথা মনগড়া বৈ কিছুই না। লেখক, শিক্ষার্থী দারুল উলূম দেওবন্দ,ভারত।