পাটের পলিথিন ও ভিসকোচ উৎপাদনে ফের আশার আলো
ফারুক আলম : বর্তমান সরকার মৃতপ্রায় পাটের হারানো সোনালি ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। পাট এখন পরিবেশবান্ধব বহুমুখী পণ্যের উপাদান। বাংলার পাট এক অন্য রকমের গৌরব। সময়ের পরিক্রমায় ‘বাংলার পাট বিশ্বমাত’- এটাই এখন বাস্তব। দেশে পলিথিনের বিকল্প পাটের তৈরি শপিং ব্যাগ উৎপাদনের মাধ্যমে পাটখাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। পাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাটের হারানো গৌরব আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পাট খাতের ব্যবসায়ীদের কিছু নীতি ও অবকাঠামোগত এবং বাজার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সহায়তা দেয়া প্রয়োজান। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) কেউ পাট কারখানা করতে চাইলে সরকার থেকে জমি দেয়া হবে।
ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করীম মুন্না বলেন, বিশ্ববাজারে চটের ব্যাগের পাশাপাশি হোম টেক্সটাইল, গিফট অ্যান্ড হাউজওয়্যার প্রডাক্ট, ফ্যাশন এক্সেসরিজ অ্যান্ড লাইফস্টাইল প্রডাক্ট উৎপাদনে ন্যাচারাল ম্যাটেরিয়ালস হিসাবে পাটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। পাটপণ্য বহুমুখী করে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ববাজর থেকে মোটা অংকের রফতানি আয় করা সম্ভব। এ জন্য ব্যবসায়ীদের নীতিগত, অবকাঠামো ও বাজার ব্যবস্থাপনা- এ তিন ধরনের সহায়তা দিতে হবে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১০ মাসে (জুলাই ২০১৬ থেকে এপ্রিল ২০১৭ পর্যন্ত) পাট ও পাটপণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ৮২ কোটি ৬৫ লাখ ইউএস ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭২ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে আগের বছরের তুলানায় পাট ও পাটপণ্য রফতানি করে আয় বেড়েছে নয় কোটি ৬৬ লাখ ডলার বা ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকার ভিসকোচ আমদানি হয়। বাংলাদেশেই পাট থেকে ভিসকোচ উৎপাদনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
এ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। একনেকের অনুমোদন নিয়ে আগামী দুই বছরের মধ্যে ভিসকোচ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে।
তিনি বলেন, প্রক্রিয়াগতভাবে পাট কৃষিপণ্যের আওতায় এনে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক মিলে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে। প্রজ্ঞাপন জারি হয়ে গেলে পাটের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, তাদের প্রত্যেককে ব্যাংকিং সুবিধাসহ কিছু না কিছু সুবিধা দেয়া হবে।
ডিসিসিআই (ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি) সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, পাটের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি পাট হতে পাল্প ও পেপার উৎপদানে মনোযোগী হলে আমরা আবারও পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে পারি। এ লক্ষ্যে পাট খাতে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন, প্রযুক্তির ব্যবহার, সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলে ওয়াহিদ খন্দকার বলেন, বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে পাটের চাষ বেশি হয়, সেখানে পাল্প (ম-) ও কাগজ প্রস্তুতকারী কারখানা স্থাপন করতে হবে। যার মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পাট হতে পাল্প ও কাগজ প্রস্তুতে পাটচাষী ও ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা সম্ভব হবে।