নিউরো হাসপতালে মূমুর্ষ অবস্থায় মুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হাশেম
নিজস্ব প্রতিবেদক : একাত্তরের রণাঙ্গণে যে শাহ হাশেম উদ্দিন পাক হানাদারদের সঙ্গে লড়তে গিয়ে ডানপায়ে গুলিবিদ্ধ, মাথায় শেলের আঘাত পেয়েছিলেন, সেই হাশেম উদ্দিন আজ মুমূর্ষু অবস্থায় দিন পার করছেন ঢাকার নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত হাশেমের দ্বিতীয় পুত্র মো. জোবায়েদুর রহমান শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে বলেন, বাবার তো এখন আর সেই যৌবন নেই। আর কয়দিনইবা বাঁচবেন। তার জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি যেন কোনো অনাদর, অবহেলার শিকার না হন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি যেন তার প্রাপ্তিটুকু পান এ দেশের মানুষের কাছ থেকেÑ এটাই আমার অনুরোধ।
২০১২ সালে হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্কের সমস্যা ও ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত হন হাশেম। চলতি মাসের (মে) ৪ তারিখে তিনি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে (স্ট্রোক) আক্রান্ত হন। এরপর তাকে নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখান থেকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হয়ে আবার আনা হয় নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউটে।
মো. জোবায়েদুর রহমান জানান, বর্তমানে হাশেমের কোনো সংজ্ঞা নেই। সাত নম্বর সেক্টরের যোদ্ধা হাশেম কী সুস্থ জীবনে ফিরতে পারবেন কি নাÑ সেটা নিয়েও তারা শঙ্কিত।
যুদ্ধের সময় দিনাজপুর বিরলের মালন ক্যাম্পে হানাদারদের গুলিতে আহত হন তিনি। এরপর ভারতে চিকিৎসা শেষে আবার যুদ্ধে যোগ দিয়ে রংপুর পীরগঞ্জের গোদাগাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন, একইসঙ্গে মাথায় শেলের আঘাত লাগে। সেই থেকে তিনি নিজে স্বাভাবিক চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। তার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও হলেও যুদ্ধের পর থেকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা আশ্রম কেন্দ্রে স্ত্রী মোসাম্মৎ লায়লা ও সাত ছেলে নিয়ে থাকতে শুরু করেন। পরবর্তীতে এখানে সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মাণ করা হয়। হাশেম সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে একটি ফ্ল্যাট ও একটি দোকান পান।
হাশেমের তিন ছেলে কর্মজীবী হলেও বাকি ৪ জন দেশের বিভিন্ন স্থানে পড়াশোনা করছেন। ওদিকে, নিজেদের সংসার ধর্ম সামলে তিনভাই বাবার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে বেশ চাপে আছেন বলে জানান দ্বিতীয় সন্তান জোবায়দুর। তিনি বলেন, অনেক খরচ, অনেক। শুধু যে বাবার ওষুধ-ডাক্তার-হাসপাতাল, তা-ই নয়। প্রতিদিন বাবার সঙ্গে লোক থাকতে হয়। তারও তো খরচ আছে। তার বাবা যেন সুচিকিৎসা পান, এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।