কুলভূষণ মামলায় নতুন আইনজীবী নিয়োগের সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের
আশিস গুপ্ত, নয়াদিল্লি : বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো সুচাগ্র মেদিনী। অর্থাৎ যুদ্ধ না করে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বো না। পাকিস্তানে মৃত্যুদ-াজ্ঞাপ্রাপ্ত কুলভূষণ যাদবকে নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে গত বৃহস্পতিবার বড় ধাক্কা খেলেও সহজে হার মানতে রাজি নয় ইসলামাবাদ। আবার নতুন উদ্যমে আন্তর্জাতিক আদালতে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তান। ভারতীয় আইনজীবী হরিশ সালভে এবং তার সহযোগীদের সামনে পাকিস্তানের পক্ষে কার্যকর যুক্তি প্রমাণ তুলে ধরতে তুলতে পারেননি তাদের সওয়াল করতে আসা আইনজীবী খাওয়ার কুরেশি ও তার সহযোগীরা। আর তাই সময় থাকতে পরিস্থিতি সামাল দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ইসলামাবাদ। কুলভূষণের মৃত্যুদ- কার্যকর করতে নতুন আইনজীবী বহাল করতে চলেছে তারা। পাল্টে ফেলা হবে দ্য হেগে তাদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে যাওয়া আইনজীবী দলকেই। দেশের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন তাদের বিদেশমন্ত্রী সরতাজ আজিজ। পাকিস্তানি সংবাদপত্র ‘দ্য নেশন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘কুলভূষণ মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গিয়েছে। সময় থাকতেই চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছে ইসলামাবাদ। দ্য হেগে আমাদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য খুব শিগগির নতুন আইনজীবী নিয়োগ করা হবে।’
পাকিস্তানে বন্দি ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন অফিসার কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদ- খারিজ করতে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে দিল্লি। গত বৃহস্পতিবার দ্য হেগে তার শুনানি চলাকালে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছিলেন হরিশ সালভে। ছিলেন অন্য আইনজীবীরাও। পাকিস্তানের হয়ে সওয়াল করছিলেন খাওয়ার কুরেশি। দু’পক্ষকেই নিজেদের অবস্থান জানানোর জন্য ৯০ মিনিট করে সময় দেওয়া হয়েছিল। যথেষ্ট ধৈর্য্য সহকারে হরিশ সালভে সময়ের সদ্ব্যবহার করলেও, মাত্র ৩৫ মিনিটে নিজের বক্তব্য শেষ করেন কুরেশি। ভারতের সামনে তার যুক্তি ধোপে টেকেনি। কুলভূষণের মৃত্যুদ-ের স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি রনি আব্রাহ্যাম। স্থগিতাদেশ কার্যকর করতে ইসলামাবাদ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তাও বিস্তারিতভাবে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই ভরাডুবির জন্য দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে যাওয়া খাওয়ার কুরেশিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ইসলামাবাদের বিশেষজ্ঞরা। প্রশ্ন করেছেন, ৯০ মিনিট সময় দিয়েছিল আদালত। তার সদ্ব্যবহার করার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিলেন কুরেশি। তা সত্ত্বেও এত অল্পে সওয়াল শেষ করলেন কেন? এর আগে ‘পাকিস্তান আইসিজের নির্দেশ মানতে বাধ্য নয় বলে গলা চড়ালেও, দেশের মাটিতেই সমালোচনার মুখে পড়ে বিপাকে পড়েছে নওয়াজ শরিফের সরকার। তাই নতুন আইনজীবী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে এ বছর এপ্রিল মাসে কুলভূষণ যাদবকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে পাক সেনা আদালত। অন্যায়ভাবে তাকে সাজা শোনানো হয়েছে বলে শুরু থেকেই দাবি করে এসেছে ভারত। বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে টেনে নিয়ে গিয়েছে। আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে কুলভূষণ ক্ষমাভিক্ষা চাইতে পারে বলে শুনানি চলাকালীন জানায় পাকিস্তান। তাতেই নড়েচড়ে বসে আন্তর্জাতিক আদালত। আগস্টের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া গেলে পাকিস্তানের সামনে কুলভূষণকে ফাঁসিতে চড়ানোর আর কোনো বাধা থাকবে না। পরিস্থিতি বুঝে তাই চূড়ান্ত রায় ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কুলভূষণের মৃত্যুদ-ের স্থাগিতাদেশ দেন বিচারপতি আব্রাহ্যাম। হতে পারে আগামী কয়েক বছর ধরে মামলা চলবে। ততদিন পর্যন্ত মৃত্যদ- কার্যকর করা থেকে পাকিস্তানকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ