অল্প জেনে অনেক বেশি জানানোটা বিরাট অপরাধ!
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি
‘অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী, কথায় কথায় ডিকশনারি’ নামের একটা বাংলা প্রবচন আছে। দেখলাম তাই-ই হয়েছে! দক্ষিণ এশিয়ার একজন সুবিখ্যাত ডাক্তারের (যার লেখা বই পৃথিবীজুড়ে পড়ানো হয়) চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিক কা-জ্ঞানহীন একটি রিপোর্ট ছেপেছে। রিপোর্টটি লিখেছেন একজন সংবাদকর্মী। তিনি শুধুমাত্র প্রেসক্রিপশন দেখে একটা মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করে ছেপে ফেলেছেন!
ইতিহাস ঘাঁটলে এ রকম অল্প বিদ্যা ভয়ংকরীদের দেখা মেলে। ১৮১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চার্লস রেডহফার নামের একজন মানুষ একটা যন্ত্র তৈরি করেছিল, যেটা নিজে নিজেই ঘুরতো! বহু মানুষ সেটা পয়সা খরচ করে দেখতে এসেছিল এবং চার্লস রীতিমতো বড়লোক হয়ে গিয়েছিল। পরে কয়েকজন সন্দেহ বাতিকগ্রস্থ লোক কাঠের কিছু তক্তা খুলে দেখলেন, একাধিক পুলি ব্যবহার করে ছাদে বসে একজন সেটা দর্শকদের জন্য ঘুরিয়ে যাচ্ছে!১৯৭১ সালে ফিলিপাইনের এক মন্ত্রী তাসাডে নামের এক সম্প্রদায়কে খুঁজে পেলেন যারা প্রস্তরযুগ থেকে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে আছে! সভ্য সমাজের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই! মিডিয়ায় খুবই হইচই হলো, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে তাদের ওপর প্রবন্ধ ছাপা হলো! পরে দেখা গেল, কিছু মানুষকে টাকা দিয়ে প্রস্তর যুগের মানুষ সাজিয়ে সেই মন্ত্রী লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিজের দলের প্রেসিডেন্টের পতনের পর দেশ থেকে পালিয়ে গেল!
অল্প বিদ্যা ভয়ংকরীরা মূর্খ হয় সেটা খুবই ভালো। সমস্যা হয় তখন যখন মানুষকে এদের মূর্খতার কারণে ভুগতে হয়! পৃথিবীতে মৃত্যু হওয়ার কারণটাই সবচেয়ে রহস্যময়। পৃথিবীর সেরা ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সøয়ান কেটারিঙয়ে খোদ হুমায়ূন আহমেদ মারা গিয়েছেন। এখন কি সবাই মিলে সøয়ান কেটারিং ধ্বংস হোক বলে সেøাগান দেওয়া শুরু করবো? তাই এ রকম মূর্খের মতোন রিপোর্ট ছাপা থেকে বিরত থাকুন। অল্প জানাটা কোনো অপরাধ নয়, কিন্তু অল্প জেনে অনেক বেশি জানানোটা বিরাট অপরাধ! মনে থাকবে?
লেখক ও ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, মাইক্রোসফট
ফেসবুক থেকে