‘অপরাজেয় বাংলা’র অপরাজেয় ভাস্কর আবদুল্লাহ খালিদ
ফিরোজ আহমেদ
বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতার ভাস্কর্য কারা ভেঙেছিল, তা নিয়ে একটা অদ্ভুদ গল্প বলছিলেন ইতিহাসে ঠাঁই করে নেওয়া একজন ছাত্রনেতা, রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ। বিস্মৃত হয়ে যাওয়া সেই ভেঙে ফেলা ভাস্কর্যটি দমিয়ে দেয়নি মানুষকে, ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ এরপর স্বাধীনতার দ্বিতীয় ভাস্কর্য স্থাপনের দায়িত্ব পান। সেই সময়কার পত্রিকা না ঘেঁটে, কাগজপত্র ছাড়া সেই গল্প বলা অন্যায় হবে, তাই আজ তা থাকÑ যদিও গল্পটার সত্যতা নিয়ে, গল্পকারের সততা নিয়ে কোনো সন্দেহ আমার নেই। সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ এর সামান্য স্মৃতি আছে সঞ্চয়ে, শিল্পীর স্মরণে সেটুকু বলি। খালেদা জিয়ার সরকার বিবিয়ানার গ্যাস ভারতে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটি একটা লংমার্চ ডেকেছিল ঢাকা থেকে সিলেট, বিবিয়ানা পর্যন্ত। এমন কর্মসূচি সেই ছিল প্রথম, আমরা ছিলাম তখন উৎসাহী তরুণ। প্রতিদিন কয়েকশত মানুষ একসঙ্গে পায়ে হেঁটে লোকালয়-হাট-বাজার পাড়ি দিতেন, মুখে রনধ্বনি, পাইপলাইনে মন্ত্রী যাবে, দেশের গ্যাস যাবে না। প্রচারপত্র বিলি হতো, প্রতিটি জমায়েতে হতো সমাবেশ বক্তৃতা। প্রত্যেকটা জেলা-থানা-উপজেলায় নতুন নতুন মানুষ যুক্ত হয়েছিলেন সেই বহরে, কেউ কেউ সীমানা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছেন, কেউ কেউ সাথী হয়েছেন শেষ পর্যন্ত।
বিবিয়ানায় আমাদের সাথী হয়েছিলেন আবদুল্লাহ খালিদ? নাকি জাতীয় কমিটির টেংরাটিলায় অথবা মাগুড়ছড়া অভিমুখে যাত্রায়? কিছুতেই মনে আসছে না। সাকি ভাইকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে। কিন্তু মনে আছে, যাত্রার আগে পরে কোনো একসময় তিনি আমাদের নৌকায় ছিলেন, উবু হয়ে বসে দুই পাড়ের গাছপালা দেখছিলেন, দেখছিলেন কর্মব্যস্ত কৃষক আর মজুরদের। বলছিলেন, এই সাধারণ মানুষেরা গড়ে আর অমানুষেরা চুরি করে। তার উপস্থিতি আমাদের দারুণভাবে উদ্দীপ্ত করেছিল, তার মোলায়েম অথচ ঋজু ব্যক্তিত্বের স্মৃতি ভুলবার নয়। জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর অকৃত্রিম সুহৃদ ছিলেন তিনি। শহীদুল্লাহ ভাই অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যটির প্রকৌশলগত কিছু পরামর্শও দিয়েছিলেন। ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ সেই মহান শিল্পীদের একজন, সময় যাকে নির্মাণ করছিল, সেই কারণেই অপরাজেয় বাংলার মতো করে তিনি সময়কে ধারণ করতে পেরেছেন। আজ সৈয়দ ফায়েজ স্মরণ করিয়ে দিল, এই ভাস্কর্যটির আদলগুলো সাধারণ মানুষের… কারণ তারা ইতিহাস গড়েছিল। অমানুষের দৌর্দ- প্রতাপের এই কালে ভাস্কর আবদুল্লাহ খালিদ প্রেরণা হয়ে থাকবেন অপরাজেয় বাংলার অপরাজেয় এক শিল্পী হিসেবে।
লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন