রামপাল প্রকল্প’, বিশ্ব ঐতিহ্য থেকে বাদ যাবে সুন্দরবন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স
সরকার রামপালে কয়লাভিত্তিক যে প্রকল্প করতে চায় তাতে আমাদের আপত্তির অনেক কারণ রয়েছে। সুন্দরবন একদিকে বিশ্ব ঐতিহ্য আরেক দিকে পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম জলাবন। এছাড়াও সুন্দরবন আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রাকৃতিক রক্ষা বর্ম। সুন্দরবনের উপরে ওই অঞ্চলের কোটি মানুষের জীবন-জীবিকাসহ বেঁচে থাকা নির্ভর করে। সুতরাং সুন্দরবন রক্ষা করা আমাদের একটা অন্যতম কারণ।
আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেকদিন ধরে সুন্দরবনের পাশে অবৈধ স্থাপনা, সুন্দরবনের নদী দিয়ে অপ্রয়োজনীয়ভাবে জাহাজ চলাচল, তেল-কয়লা জাহাজ ডুবি, অবৈধ দখল, বনের গাছপালা চুরি, অপরিকল্পিত পর্যটনসহ নানা কারণে সুন্দরবন এমনিতেই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যখন সুন্দরবন রক্ষা করাটাই কাজ ছিল তখন আমরা দেখলাম সরকারের পক্ষ থেকে ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হচ্ছে। এটা করার শুরুতেই কোনো নিয়ম-কানুন মানা হয়নি। স্থানীয় জনগণের সম্মতি না নিয়ে জোর জবরদস্তি করে জমি নেওয়া হয়েছে। ইআইএ (এনভায়রনমেন্টাল ইমপেক্ট অ্যাসেসমেন্ট) এর আগেই জমি নেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি না নিয়েই সেখানে জমি দখল করে তারা একটা বিদ্যুৎ প্রকল্প শুরু করেছে।
আমরা স্থানীয় জনগণ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার পর দেখলাম যে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের জন্য উপকারে থেকে ক্ষতির কারণ হবে। তার এক নম্বর কারণ এখান থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে, এখন সাধারণভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ছয় টাকার কম কিন্তু ওইখান থেকে যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তাহলে এর খরচ পরবে নয় টাকারও বেশি। সুতরাং বিদ্যুৎ উৎপাদনের দাম বেশি পড়বে। ভারতের কোম্পানির সঙ্গে যৌথ কোম্পানি হওয়ায়, লাভ হলে ভাগাভাগি হবে। আর লোকসানের দায় আমাদের। এরপর হলো সুন্দরবনের ক্ষতি।
দেশ ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, এমনকি ইউনেস্কো তারা যে কথাগুলো বললেন তার মধ্যে প্রথমত হচ্ছেÑ এ ধরনের কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে যে ধোঁয়া নির্গত হয় এর মধ্যে যে সমস্ত ক্ষতিকর পদার্থ থাকে তা ওই অঞ্চলের জনমানুষের জীবনযাপনসহ সুন্দরবনকে বিপন্ন করবে। দ্বিতীয়ত, এখান থেকে যে পানি ছাড়া হবে তা গরম পানি। এই পানি মাছ, পোনা, জলজ জীববৈচিত্র ধ্বংস করবে। তিন নম্বর হচ্ছেÑ এখান থেকে যে ছাই, যার মধ্যে দূষিত পদার্থ থাকবে তা পুকুরে রাখা হবে। এর জন্য ২৫ একর জমি রাখা হয়েছে। সেখানেও মাটি এবং পানিতে মিশে তা মাটি-পানির গুণাগুণ নষ্ট করবে। চার নম্বর, এখান থেকে অবাধে নদীপথে যে কয়লা আনা নেওয়া করবে জাহাজে করে তা সুন্দরবনকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। পাঁচ নম্বর, এ ধরনের প্রকল্প হলে, এর পাশে আরও স্থাপনা গড়ে উঠবে। যা সুন্দরবনকে অনিবার্যভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। এটা আমরা অনেকদিন ধরে বলে আসছি। চলবে- (০১)
পরিচিতি: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সিপিবি
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি/সম্পাদনা: আশিক রহমান