ফেসবুকে ‘ভরসা’র তামাশা
স্বকৃত নোমান
কদিন ধরে ফেসবুকে একটা তামাশা দেখছি। একদল ফেসবুক ব্যবহারকারী তাদের প্রোফাইল পিকচারের ফ্রেমে লিখল, ‘ভরসা রাখুন নৌকায়।’ বোঝাই যাচ্ছে এরা আওয়ামী লীগের সমর্থক বা নেতা-কর্মী। এটা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার একটা অংশ।
কদিন পর এই প্রচারণার কাউন্টার হিসেবে আরেক দল তাদের প্রোফাইল পিকচারের ফ্রেমে লিখল, ‘ভরসা রাখুন আল্লাহর উপর।’ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারে এমনটাও দেখতে পেয়েছি। দেখে আমার হাসি পেল। কেউ যদি আল্লাহর উপর ভরসা রাখে কারও কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। স্বাধীন রাষ্ট্রে প্রত্যেক স্বাধীন নাগরিক নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস স্বাধীনভাবে পালন করবে। যে কেউ যে কারও উপর ভরসা রাখতে পারে, ভরসা রাখার কথা বলতে পারে। আপত্তিটা তখনই উঠে, যখন ‘ভরসা রাখুন নৌকায়’র কাউন্টার হিসেবে, ‘ভরসা রাখুন আল্লাহর উপর’-কে হাজির করা হয়। এটা খুবই আপত্তিকর। ক্ষমতালিপ্সার এই রাজনৈতিক প্রপাগান্ডায় আল্লাহকে নামিয়ে আনাটা প্রকারান্তরে আল্লাহকেই অসম্মানেরই নামান্তর। প্রশ্ন হচ্ছে, ‘ভরসা রাখুন নৌকায়’ লেখা প্রোফাইল পিকচার চালু হওয়ার আগে তোমাদের আল্লাহ কোথায় ছিলেন? তখন কেন তোমরা প্রোফাইল পিকচারে তাঁর উপর ভরসার কথা লেখনি? তখন কি তিনি ছিলেন না? তিনি কি সবসময় তোমাদের সঙ্গে থাকেন না? নাকি প্রয়োজন বুঝে তোমরা তাকে তোমাদের ঘৃণ্য রাজনৈতিক জোচ্চুরির মধ্যে টেনে আনো? স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, যারা মার্ক জাকারবার্গ আবিষ্কৃত ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে ‘ভরসা রাখুন নৌকায়’-র কাউন্টার হিসেবে ‘ভরসা রাখুন আল্লাহর উপর’ লিখছেন, তারা যে ধর্মব্যবসায়ী। বোঝা যাচ্ছে তারা যে ধর্মকে নেংটো করে রাজনীতিতে ব্যবহার করছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে। স্বাধীকার আন্দোলনকে ধর্মযুদ্ধ বলে চালাতে চেয়েছে। লাভ হয়নি। সেই ব্যবহার এখনো চলছে। রাজনীতিতে ধর্মের এই ঘৃণ্য ব্যবহার আর কতদিন চলবে? কতদিন তোমরা আল্লাহর নামে মানুষকে ধোকা দিতে থাকবে? মানুষ একদিন নিশ্চয়ই জাগবে। বুঝতে পারবে, যাকে তারা পরম বলে জানে, করুণাময় বলে মানে, তাঁকে নিয়ে তোমাদের এই ধোকাবাজি, সেদিন তোমরা সেসব মানুষের পদতলে পিষ্ট হয়ে পিঁপড়ার মতো মরবে। নিশ্চিত মরবে। সেই দৃশ্য হয়ত আমরা দেখে যেতে পারব না। আমাদের পুত্র বা পৌত্ররা যে দেখবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক: কথাসাহিত্যিক
সম্পাদনা: আশিক রহমান