লোডশেডিং বিদ্যুৎ বিভাগের অব্যবস্থাপনার ফল
রাজেকুজ্জামান রতন
রাজধানীসহ সারাদেশের অসহনীয় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়া পেছনে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের অব্যবস্থাপনা। আমরা জানি, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সারাদেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। তখন মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা অনেকগুণ বেড়ে যায়। আমাদের প্রস্তুতি যদি আগে থেকে সম্পন্ন করতে না পারি তাহলে প্রকৃতিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। বর্তমানে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে অনেকগুণ। একদিকে সারাদেশে দাবদাহ বৃদ্ধি অন্যদিকে লোডশেডিংয়ে নাগরিক জীবন বিপর্যস্ত। এ সমস্যা মোকাবিলা চার-পাঁচদিনের মধ্যে হয়ে যাবে। এটা ভাবা কষ্টকর। আশ্বাসে তো আর সমস্যা সমাধান হয় না। বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াট, বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াট। দেশে কোথাও লোডশেডিং নেই। অর্থাৎ কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, দেশে লোডশেডিং নেই। অন্যদিকে বাস্তবে জনগণ লোডশেডিংয়ে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছে। আবার ওদিকে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলছেন যে, লোডশেডিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক হবে?
দেশের প্রায় ১৭-১৮ বিদ্যুৎ ইউনিটে বিদ্যুৎ কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে আছে। অন্যদিকে দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে সময়মতো সংস্কার না করে আমাদের নজর রাখা হয়েছে ভারতের বিদ্যুৎ আমদানির দিকে। ফলে আমদানি নির্ভর বিদ্যুৎ এবং সময়মতো প্ল্যান্টগুলোকে মেরামত কার্যক্রম পরিচালনা না করা। এমনকি যেকোনো আপদকালীন সময়ের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ না করার ফলে আজকে জনগণের করুণ অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আর এ দুর্যোগকে কাজে লাগিয়ে সরকার বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্ষমতাসীনদের এ সুযোগটা এনে দেয়। বিদ্যুৎ যে জনগণের অধিকার বিষয়টিকে এড়িয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবসার দিকে সুযোগ করে দেওয়া হয়। মূলত বিদ্যুৎ খাতটি পরিচালিত হচ্ছে অব্যবস্থাপনা এবং অপরিকল্পিতভাবে। টেকসই উন্নয়নের দিকে নজর না দেওয়া। আর এ কারণেই সরকার বিদ্যুৎ খাতে একটা বিপুল অংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। ভর্তুকির পরিমাণ যা দেওয়া হচ্ছে তা এক ধরনের অপচয় এবং দুর্নীতির কারণেই। শুধুমাত্র ভর্তুকিই যথেষ্ট নয় এবং সেটার যেন যথাযথ ব্যবহার করা হয়, যেন একটা জবাবদিহি থাকে।
পরিচিতি: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাসদ
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন/সম্পাদনা: আশিক রহমান