ট্রাম্প মুসলিম বিশ্বকে কি বার্তা দিলেন?
ড. এম শাহীদুজ্জামান
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সৌদি সফর করেছেন। এই সফরে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তিনি দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছেন, তিনি তার আগের অবস্থান প্রত্যাখ্যান করেছেন। এবং মুসলিম নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, আমেরিকা আসলে মুসলমানদের স্বার্থ দেখতে চায়। এখানে দুইটা বড় রকমের গাফিলতি আছে। একটা হচ্ছেÑ প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের ব্যাপারে তিনি কোনোরকম প্রমিজ করলেন না। এটা আমেরিকার দায়িত্ব ছিল। এ ব্যাপারে ট্রাম্প চরম বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। দ্বিতীয়ত হচ্ছেÑ ইরানকে তিনি সৌদি রাজার রাজতন্ত্রের স্বার্থে পুরোপুরি একটা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করলেন, যেটা সম্পূর্ণ একটা অপব্যাখ্যা। এটা খুবই দুঃখজনক। ট্রাম্প কিন্তু মোটেই সত্যের কাছাকাছি নন। তিনি আমেরিকার স্বার্থ এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যে ধরনের চিন্তা আগে করেছিলেন সেটারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখছেন। কাজেই ট্রাম্পের সৌদি আরব সফর রাজতন্ত্রের জন্য খুবই ভালো। তাছাড়া বাংলাদেশের মতো দেশগুলো একটা সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারছে, এটাও একটা ভালো দিক।
প্রকৃতপক্ষে তিনি প্যালেস্টাইন সমস্যার কোনো সমাধান দিচ্ছেন না। তিনি বরং প্যালেস্টাইনের বিষয়টাকে আরও জটিল করে তুলছেন। দুই রাষ্ট্র সলুশনে না গিয়ে এক রাষ্ট্র ধারা অর্থাৎ প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র সৃষ্টি না হওয়া। সেদিকেই তারা কার্যত এগোচ্ছে। ট্রাম্প সেই প্রক্রিয়াকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।
আমি দেখবো যে আগামী দিনে প্যালেসটাইনে গিয়ে তিনি তাদের কি বলেন? প্যালেস্টাইনে গিয়ে যদি সত্যি তিনি প্রমিজ করেন যে তাদের রাষ্ট্র হবে তাহলে বুঝব তার কথায় হয়তো কিছুটা সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যেটা দেখলাম আমেরিকার যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি বললেন, প্যালেস্টাইন না হলেও তিনি খুশি থাকবেন, যদি ইসরায়েল সেটা চায়। ট্রাম্প আসলে ইচ্ছা করলে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে পারেন। ডেমোক্রেট পার্টি অনেক বেশি ইসরায়েল ঘেষা ছিল এবং হিলারি ক্লিনটন সরাসরি আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে যেভাবে আরব দেশগুলোকে আক্রমণ করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন তাতে প্যালেস্টাইন প্রশ্ন আরও বেশি ইনসিকিউর ছিল। এখন দেখা যাক ট্রাম্পের শাসনামলে কি হয়। তিনি হয়তো আগামী দিনে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের ধারণাকে টিকিয়ে রাখবেন, না হয় সরাসরি সেটাকে অকেজো করে দেবেন। কাজেই আমরা এ বিষয়ে একটা কার্যকর অবস্থান দেখতে পাব আগামী কয়েকদিন অপেক্ষা করলেই।
পরিচিতি: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাবি
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ/সম্পাদনা: আশিক রহমান