খ্রিস্টান নেতৃবৃন্দকে ঐক্যের আহ্বান কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও’র
খ্রিস্টীয় দর্পণ ডেস্ক
এক ইমেল বার্তায় কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি দেশের খ্রিস্টান নেতৃবৃন্দের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। ১ মে অন্তত ২৫জন নেতৃস্থানীয় খ্রিস্টভক্তকে প্রেরিত সেই বার্তায় বলা হয়েছে, ‘এটা অনেক মানুষের নিকট দুঃখের এবং একই সাথে কলংকের যে সম্প্রতি বাংলাদেশের এবং বিদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ এবং অনৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে’। খ্রিস্টান নেতৃবৃন্দকে বিভেদ ভুলে ক্ষমার মাধ্যমে ঐক্য প্রতিষ্ঠার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
‘ইমেল বার্তা’
গতদুই দিন চায়ের টেবিলে অনেকের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো কার্ডিনাল মহোদয়ের ঐক্যের আহ্বান। অনেকে বলছেন, এই ধরনের বার্তা কার্ডিনাল প্যাট্রিককে আরো আগে পাঠানো উচিত ছিল। ডানিয়েল গমেজ নামের একজন যুবক বলেন, ‘দেশে খ্রিস্টানরা ক্ষুদ্র একটি সম্প্রদায়। কিন্তু এই সম্প্রদায়ের মধ্যেই রয়েছে বিভেদ। এই বিভেদ সৃষ্টি করছে ক্রেডিট ইউনিয়ন। সংখ্যালঘু হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এই বিভেদ ভুলে সকলকে মিলতে হবে।’ তিনি কার্ডিনাল মহোদয়ের ঐক্যে আহ্বানকে স্বাগত জানান।
খ্রিস্টানদের দ্বারা পরিচালিত দেশের সর্ববৃহৎ সমবায় সমিতি দি খ্রিস্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি. ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) এর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছে বিভেদ। গত বছরের শেষের দিক থেকে শুরু হয় নির্বাচনকে ঘিরে দুইটি দলের মধ্যে দলাদলি, বিদ্বেষ। যারা আগে একই টেবিলে বসে খেতেন, হাত মেলাতেন তারা হয়ে গেলেন শত্রু। এখন একে অপরের করা মামলায় জর্জরিত হচ্ছেন উভয়পক্ষ। লাভবান হচ্ছেন তৃতীয় একটি পক্ষ। ঢাকা ক্রেডিটের নির্বাচনে একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন আব্রাহাম গোমেজ। তিনি বলেন, ‘কার্ডিনালের এই ঐক্যের আহ্বান জানানো অনেক বিলম্ব হয়ে গেছে। দুই পক্ষ দুইটি অবস্থানে চলে গেছে। তারপরও গুরুজন হিসেবে তিনি যদি উদ্যোগ নেন, দুই দলকে সংলাপে বসার জন্য ডাকেন, আমি মনে করি খ্রিস্টান সমাজের নেতৃবৃন্দের মধ্যে পুনঃরায় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব’।
প্রসঙ্গত, ১৫ জানুয়ারী ঢাকা ক্রেডিটের বিতর্কীত নির্বাচনের পর নির্বাচন বয়কটকারী পক্ষ ‘খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশে’ নামে একটি নতুন সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। আব্রাহাম গোমেজ সেই সংগঠনের প্রেসিডেন্ট।
ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন সেক্রেটারী এবং বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত আই কোড়াইয়া বলেন, ‘আমরাও ঐক্য চাই। কেউ যদি নিঃশর্তভাবে সংলাপে বসতে চায়, আমরা সেই সংলাপে বসবো’।
খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশে এর সাধারণ সম্পদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার যিনি ঢাকা ক্রেডিটের নির্বাচনে গাব্রিয়েল-শীতল-দীপক-টুটুল পরিষদের পক্ষে কাজ করেছে, তিনি বলেন, ‘আমাদের উপর যে অন্যয্যাতা হয়েছে, সেটার ন্যায্যতা আমরা চাই। আমাদের নামে বর্তমান সরকারের মন্ত্রীদের নিকট নালিশ করা হচ্ছে। আমাদের নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। আমি মনে করি কার্ডিনাল সময় উপযোগী ইমেল বার্তা লিখেছেন। ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন, আমাদের সকলের তার কথা শোনা উচিত, সংলাপে বসা উচিত’।
সচেতন মানুষ মনে করেন, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে উভয়পক্ষকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আলোচনা সভায় বসে দ্রুত খ্রিস্টান সমাজের নেতৃবৃন্দের এই বিভেদ দূর করা এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবী। প্রসঙ্গত, ১৯৫৫ সালে ঢাকা ক্যাথলিক মহা ধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ লরেন্স লিও গ্রেণারের পৃষ্ঠপোষকতায় ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যার বর্তমান সদস্য সংখ্যা (ক্রেডিট) ৩৬ হাজারের বেশি।
সূত্র : বিডি খ্রিস্টান নিউজ