বাবরি মসজিদ মামলা আদবানি, যোশী, উমা ভারতীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন
আশিস গুপ্ত, নয়াদিল্লি : চার্জ গঠন না করার আবেদন নাকচ করে দিয়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসকা-ের মামলায় লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলীমনোহর যোশী, উমা ভারতীসহ মোট ৬ জন বিজেপি নেতা ও ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করলো লখনৌয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত। চার্জ গঠনের আগে প্রত্যেককে ব্যক্তিগত ২০ হাজার টাকা বন্ডে জামিন মঞ্জুর করে আদালত। গতকাল মঙ্গলবার আদালতে এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলার চার্জ গঠন করার আগে অভিযুক্তদের পক্ষে আদালতে চার্জ গঠন না করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই আবেদন নাকচ করে দিয়ে বিচারপতি এস কে যাদব বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই মামলা প্রক্রিয়া চলছে। তাই চার্জ গঠন খারিজ করা সম্ভব নয়। লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলীমনোহর যোশী, উমা ভারতী, বিনয় কাটিয়ার, বিষ্ণুহরি ডালমিয়া, সাধ্বী ঋতম্ভরা’র বিরুদ্ধে ভারতীয় দ-বিধির ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ১৫৩ধারা (ধর্ম, জাতি, জন্মস্থানের নামে মানুষের মধ্যে শত্রুতা তৈরি করা), ১৫৩এ এবং ২৯৫ ধারা (ধর্মস্থানের বিকৃতি ঘটিয়ে অন্য ধর্মকে অবমাননা করা), ২৯৫এ এবং ৫০৫ ধারায় (মানুষকে দুষ্কর্মে উৎসাহিত করতে বিবৃতি দেওয়া ) মামলা চলবে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ ও ২৬শে মে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলীমনোহর যোশী, উমা ভারতী, বিনয় কাটিয়ার, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিষ্ণু হরি ডালমিয়া এবং সাধ্বী ঋতাম্বরাকে আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি এসকে যাদব। কিন্তু তারা উপস্থিত হননি। ২৬ মে বিচারপতি জানিয়ে দিয়েছিলেন কোনও রকম অজুহাত দেখিয়ে ৩০ মে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি মিলবে না। বাবরি মসজিদ ধ্বংস নিয়ে বর্তমানে দু’টি মামলার শুনানি চলছে আদালতে। দ্বিতীয় মামলাটিতে মহন্ত নৃত্যগোপাল দাস, মহন্ত রামবিলাস বেদান্তি, বৈকুণ্ঠলাল শর্মা ওরফে প্রেম জি, চম্পত রাই বনসাল, মহন্ত ধর্ম দাস এবং সতীশ প্রধানের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হবে একই ধারায়। ওই ৬ জন আগেই আদালতে হাজির হয়ে জামিন পেয়েছেন।
উল্লেখ্য গত ১৯ এপ্রিল মামলার শুনানিত আদবানি, জোশী, এবং উমা ভারতীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রেও মামলা চালানোর নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। মামলাটিকে রায়বরেলি থেকে সরিয়ে লখনউয়ের বিশেষে সিবিআই আদালতে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে ২ বছরের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। গতকাল মঙ্গলবার সকালে লখনৌ পৌঁছান আদবানি এবং মুরলীমনোহর যোশী। সরকারি অতিথিশালায় তাদের সঙ্গে দেখা করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্র্রী যোগী আদিত্যনাথ। অতিথিশালা থেকে ১২টা নাগাদ আদালতে যান তারা। আদালতে যাবার আগে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী উমা ভারতী বলেন ‘আমি নিজেকে অপরাধী বলে মনে করি না। আমি স্বজ্ঞানে স্বেচ্ছায় ওই অভিযানে অংশ নিয়েছিলাম। এই মামলা ভগবানের সঙ্গে যুক্ত, আমার সব আশা আকাঙ্খাও ভগবানের কাছে। আরেক অভিযুক্ত নেতা ও সাংসদ বিনয় কাটিয়ার বলেন ‘বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র ছিলো না। ওটা ছিল স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। আমাদের বিরুদ্ধে নয়, মামলা দায়ের করা উচিত ছিল মুলায়েম সিং যাদবের বিরুদ্ধে। কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাস জড়িয়ে আছে রাম মন্দিরের সঙ্গে।’ অভিযুক্তদেও পক্ষের আইনজীবী অখিলেশ অবস্থি বলেছেন, ‘আমরা আজ আদালতে বলেছিলাম চার্জ গঠন না করে মামলা খারিজ করা হোক। কারণ অভিযুক্তরা কেউই কোনো ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত নয়। কিন্তু মাননীয় বিচারপতি আমাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। আমরা এবার হাইকোর্টে আপিল করবো।’ সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ