পাট প্যাকেজিং আইন লঙ্ঘন করছে খাদ্য অধিদফতর
ফারুক আলম : সরকারের ৫০ হাজার টন চাল আমদানিতে খাদ্য অধিদফতরের প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করার সিদ্ধান্তে জুটমিল মালিকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে খাদ্য অধিদফতরের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এদিকে আলাদাভাবে বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন পাট বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে দেশের পাট শিল্পের স্বার্থে এ সিদ্ধান্তটি পুনরায় বিবেচনা করতে অনুরোধ করেছে। বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপের ফলে খাদ্য অধিদফতর বিদ্যমান বাধ্যতামূলক পাট প্যাকেজিং আইন-২০১০’ এর লঙ্ঘন করেছে। চিঠিতে পাট বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথা বলেন। বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এই পদক্ষেপটি কেবল একটি দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারী পদক্ষেপই নয়, এটি চলমান আইনেরও পরিপন্থী।
সম্প্রতি খাদ্য অধিদফতর এক টেন্ডার আয়োজনের মাধ্যমে সরকারের ৫০ হাজার টন চালের জন্য ৫০ কেজির প্লাস্টিক ব্যাগ
(পলিপ্রপাইলিন ওভেন ব্যাগ) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত জানায়। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সচিব আব্দুল বারিক খান বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী চাল, ধান, চিনি, ডালসহ মোট ১৭টি পণ্যে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যাবহার সম্পন্ন নিষিদ্ধ। এরপরেও খাদ্য অধিদফতরের এরূপ সিদ্ধান্ত আমাকে হতাশ করেছে। তিনি আরও বলেন, খাদ্য অধিদফতরের এমন কার্যকলাপে অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা আইন লঙ্ঘন করে চলবে।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোনো স্টেকহোল্ডার যদি আইন লঙ্ঘন করে, তবে তার জন্য এক বছরের জেল অন্যথায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা জেল-জরিমানা উভয় দ-েই দ-িত হতে পারে।
এ বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, আমাদের দেশে পাটের বস্তা পর্যাপ্ত কিন্তু আমরা যে দেশ থেকে চাল আমদানি করবো সেখানে পাটের বস্তা যথেষ্ট নাও থাকতে পারে। সেজন্য বিজ্ঞপ্তিতে ওভেন পলি প্রপাইল ব্যাগ (পিপি) ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো যাতে সরকারের কোনো আইন লঙ্ঘন না হয়। গম জাহাজে খোলা অবস্থায় আমদানি করা সম্ভব হলেও চাল সম্ভব নয়।
খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান বলেন, বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহের যে লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে তা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর কারণ চাল সংগ্রহে যে দর ঘোষণা করা হয়েছে, সেই দরে চাল পাওয়া নাও যেতে পারে। যে কারণে সরকার প্রাথমিকভাবে এক লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর চালের চাহিদার পুরোটাই উৎপাদন করেছেন কৃষকরা। কোনো কোনো বছরে কিছু উদ্বৃত্ত উৎপাদন হয়েছে। যার ফলে সরকার ২০১৪ সালে চাল রপ্তানি করে। কিন্তু এ বছর হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যা, দেশব্যাপী অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, ধানে ব্লাস্ট রোগসহ বিভিন্ন কারণে বোরো মৌসুমে লক্ষ্য অনুযায়ী উৎপাদন না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে তিন বছর পর আবারও চাল আমদানি করছে সরকার। আপাতত সরকার এক লাখ টন চাল আমদানি করবে। এর মধ্যে ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য খাদ্য অধিদফতর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে। বাকি ৫০ হাজার টন আমদানিতে কিছুদিনের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে। সম্পাদনা : ইয়াছির আরাফাত