বিতর্কে নয়. আস্থায় থাকুক বিচারবিভাগ
এ্যাড.তৈমূর আলম খন্দকার
বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহিম। ২৫-৫-২০১৭ দিবাগত রাত্রে সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে থেকে বিতর্কিত মূর্তি নামান্তরে ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলা হয়। বিচার বিভাগ থেকে এ মর্মে কোনো মন্তব্য না পাওয়া গেলেও সরকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিসহ দায়িত্বশীল অনেকেই বলেছেন যে, সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব সিদ্ধান্তেই এ অপসারণ। কোন কারণে মূর্তি স্থাপন হলো এবং কোন কারণে তা অপসারণ হলো এ মর্মে সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি জানতে চেয়ে মিটিং করেছে সরকারের শরিক দল ওয়াকার্স পার্টি। বাম দলসহ সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব মূর্তি অপসারণের বিরুদ্ধে মিছিল, মিটিং, মানববন্ধন, এমনকি কারাবন্দি হয়েছেন। বামেরা সংখ্যায় কম হলেও প্রতিবাদের ভাষা খুবই তীক্ষ্ম। দেশের সিনিয়র আইনজীবী যিনি নিজেকে অসাম্প্রদায়িক ভাবেন, বামদের অভিভাবকও বটে, (ড. কামাল হোসেন) তিনি কিন্তু কোনো পক্ষেই কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘আইনজীবীদের একটি সম্মেলন হবে, সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ সংবিধান প্রণেতা ধর্মনিরপেক্ষতাকে যিনি স্বাধীনতার চেতনা মনে করেন তিনিও এ মর্মে কোনো কথা বলতে চাননি। কারণ কি হতে পারে? তিনি নিশ্চয় মনে করেছেন যে, বিষয়টি বিতর্কিত। তাই তিনি এ মুহূর্তে মন্তব্য করেননি। ২৭-৫-২০১৭ গভীর রাত্রে সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবনের সামনে মূর্তিটি পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। এ নিয়েও চলছে চরম বিতর্ক।
ভাস্কর নিজে বলেছে যে, মূর্তি/ভাস্কর্য অপসারণ করায় বাঙালি সংস্কৃতির পরাজয় হয়েছে। ইলিশ মাছ আর পান্তা ভাত যেমন বাঙালি সংস্কৃতি নয় তেমনি মূর্তির সঙ্গেও বাঙালি সংস্কৃতির কোনো সম্পর্ক নেই। ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’ এই বাঙালির ঐতিহ্য নষ্ট করেছে বারবার বর্গীরা এ দেশকে হানা দিয়ে। সর্বশেষ লুট করেছে হানাদার পাকিস্তান ও পাকিস্তানের ২২ পরিবার যা বর্তমানে বাংলাদেশের ২২ হাজার পরিবার লুটে খাচ্ছে। এ লুটেরা দেশকে লুট করে গরিবকে আরও গরিব এবং নিজেরা ধনি থেকে আরও ধনী করার পথ খুঁজে নিয়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে জনগণের অর্থ ডাকাতি করছে কলমের সাহায্যে। তাই আজ বাঙালিকে নিয়ে এসেছে পান্তা ভাতের সংস্কৃতিতে। মূর্তি বাঙালিদের সংস্কৃতি হতে পারে না। কারণ অসাম্প্রদায়িক বাঙালি বিভিন্ন ধর্মে বিভক্ত। তবে তারা অসাম্প্রদায়িক হলেও ধর্মভীরু। এই ধর্মভীরু তাকেই নাস্তিকরা ধর্মান্ধ বানিয়ে বাঙালি সংস্কৃতিকে একপেশে করে দিয়েছে, যাদের জ্ঞান বাঙালি জাতিসত্ত্বা সম্পর্কে আরও গভীর হওয়া দরকার। অহেতুক সংজ্ঞা দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে নাস্তিকেরা যারা স্বাধীনতার চেতনা ও ধর্ম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
বিচার বিভাগসহ সকলেরই দায়িত্ব বিচার বিভাগকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা। মূর্তিটি অপসারণ নয় বরং স্থানান্তরের মাধ্যমে কি বিতর্কের অবসান হয়েছে? বরং বিতর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। বামদের ধারণানুযায়ী যদি হেফাজতকে খুশি রাখার জন্য এ মূর্তি সরানো হয়ে থাকে তবে একদিকে বামরা তো বিক্ষুব্ধ, অন্যদিকে হেফাজত ও ধর্মভিত্তিক দলগুলো আরও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। তাদের সঙ্গে সরকার প্রতারণা করছে বলে হেফাজত দাবি করেছে। এদিকে সরকারি ঘরনার বাম দল (মেনন পন্থি) মূর্তি কি কারণে সরানো হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নিকট ব্যাখ্যা চেয়ে বিবৃতি দাবি করেছে। সুপ্রিম কোর্টের যিনি অভিভাবক তিনি হলেন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪(২) মোতাবেক বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। (চলবে-১)
লেখক: কলামিস্ট ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা
ঃধরসঁৎধষধসশযধহফধশবৎ@মসধরষ.পড়স
সম্পাদনা: আশিক রহমান