অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এবং একাত্তরের পরাজিত শক্তি
শাহরিয়ার কবীর
লাখো শহিদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশ। এই দেশ পরিচালিত হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল কর্তৃক। এখানে যারা রাজনীতি করবেন তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশের প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য থাকতে হবে। প্রগতিশীল উদার মানসিকতা থাকতে হবে। কিন্তু আমরা কি এখানে সবকিছু সঠিকভাবে পরিচালিত হতে দেখছি? দেখছি না। এখানে নানা সময়ে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী অপতৎপরতায় চালায়। সংস্কৃতির উপর আঘাত হানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। আমাদের ভাস্কর্যগুলোর উপর তাদের চোখ পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল ও সরকারও যেন তাদের দাবিমতো কাজ করার জন্য প্রস্তুত! তা না হলে সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ন্যায়বিচারের প্রতীক ভাস্কর্য সরাতে যাবে কেন?
আমাদের ক্ষোভ, বিক্ষুব্ধ হওয়ার জায়গাটি হলোÑ বর্তমান সরকারই ২০১৩ সালে হেফাজতের তা-ব মোকাবিলা করেছিল সফলতার সঙ্গে। তাদের অপতৎপরতা রুখে দিয়েছিল। কিন্তু এখন আমরা দেখছি? ঠিক যেন উল্টোটা। এখন আমরা দেখছি সেই সরকারই হেফাজতের সঙ্গে নানারকম সমঝোতা, আপোসরফা করেছে, টাকাপয়সা দিয়ে ম্যানেজ করছে। তাদের কথামতো পাঠ্যপুস্তক থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ, বাঙালির ইতিহাস, কিংবা বাংলা ভাষার যে গৌরব বা নিদর্শন, চেতনা, সংগ্রামের বিষয় এগুলোকে তাদের দাবি অনুযায়ী বাদ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ তাদের দাবি অনুযায়ী কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে কোনোপ্রকার মূল্যায়ন করা ছাড়াই। এই স্বীকৃতির বিরুদ্ধে আমরা নই। আমরা আগেই এই স্বীকৃতির কথা বলেছিলাম। কিন্তু তারা বলেছিল, কওমি মাদ্রাসার উপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না, শুধু তাদের ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এটা মেনে নেওয়াটাও একধরনের আত্মসমর্পণ। এগুলো তো রাজনৈতিক দলগুলো একের পর এক করে আসছে। এটা আমাদের ক্ষোভের কারণ সরকারের প্রতি।
হ্যাঁ এখানে একটা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আছে। সেটা আমরা মনে করলাম কিছুটা যুক্তি আছে। সেটা হচ্ছে ঈদগাহ থেকে ভাস্কর্যটা দেখা যায়। অনেকের সেন্টিমেন্টে লাগতে পারে। আরেকটা ছিল যে ভাস্কর্যটা আমাদের বাংলাদেশের পতাকাকে ঢেকে দিয়েছিল। এই যুক্তিতে স্থানান্তরিত করাটা ঠিক আছে। কিন্তু ভাস্কর্যটা যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে কি পুনঃস্থাপন করা হয়েছে?
আমরা সবসময় বলেছি, আপনি একবার যখন নতিস্বীকার করবেন তখন বারবার আপনাকে নতিস্বীকার করতে হবে। এদের চাহিদার তো সীমা নেই। এদের লক্ষ্যটাও তো আমাদের মনে রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এরা আসলে কি চায়? হেফাজত-জামায়াত একাত্তরের বদলা নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এরা একাত্তরের সমস্ত মানবতাবিরোধী কাজ করেছে। একাত্তরে এরা পাকিস্তানিদের খেদমত করেছে, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অংশ নিয়েছে। এদের কাছে কেন আমরা নতিস্বীকার করতে যাব, যারা এই বাংলাদেশকেই স্বীকার করে না। বাংলাদেশের পতাকা, জাতীয় সংগীত গায় না। তাদের বিষয়ে আমাদের সুচিন্তা জরুরি। ভুল সিদ্ধান্ত ও চিন্তা আমাদের বড় বিপদের কারণ হতে পারে বলে মনে করি আমি।
পরিচিতি: সভাপতি, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান