একমাসেও ধরা পড়েনি ঘাতক স্বামী পোস্টমর্টেম রিপোর্টের অপেক্ষায় পুলিশ
ইসমাঈল হুসাইন ইমু : স্ত্রীকে আগুনে পুড়ে হত্যার ঘটনায় ঘাতক স্বামী মৃদুল একমাসেও ধরা পড়েনি। পুলিশ বলছে তদন্ত চলছে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, গত ৩০ এপ্রিল মধ্যরাতে চট্টগ্রামের কোতয়ালি থানা এলাকার আন্দরকিল্লার ঘাটফরহাদবেগ ইয়াকুব ম্যানসনের ২য় তলার বাসায় মৌসুমি রানীর শরীর আগুনে ঝলসে দেয়া তার স্বামী মৃদুল চন্দ্র। রানীর চিৎকারে আশাপাশের লোকজন প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১ মে মারা যান ওই গৃহবধূ। নিহতের স্বজনরা জানান, বিয়ের পর থেকে বিভিন্নভাবে মোটা অংকের যৌতুক দাবি করে আসছিল মৃদুল। তার অনেক দাবিই পুরন করা হয়েছে। সম্প্রতি তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে রানীর ছোট বোনের দিকে। এছাড়া পরকীয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শ্বশুর বাড়ির সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে মৃদুলের পরিবার। কারন হিসেবে তারা জানান, ঘটনার দিন রানীকে নিয়ে বাসার সকলের ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও ঘটনাস্থল (বাথরুম) এর আশপাশের আলামত দোয়া মোছার কাজে ব্যস্ত ছিল সবাই। রানীর পোশাকও ধুয়ে পরিষ্কার করা হয় দ্রুত। বাথরুমের টাইলসও বদল করা হয়। নিজেকে সাধু সাজাতে ঢামেক হাসপাতালে হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে স্ত্রীকে দেখতে যায় মৃদুল। দ্রুত লাশ নিয়ে সৎকারের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সে। এক পর্যায়ে পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করে। এদিকে এ ঘটনায় নিহতের মা অংগনা রানী সিংহ বাদী হয়ে চট্টগ্রামের কোতয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলায় মৃদুলকে প্রধান আসামী করা হয়। এছাড়া মামলার অপর আসামীরা হলেন, মানিক চন্দ্র সিংহ, চন্দনা রানী সিংহ, বাদল চন্দ্র সিংহ, প্রশান্ত চন্দ্র সিংহ, প্রদীপ চন্দ্র সিংহ ও প্রিতম চন্দ্র সিংহ।
এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সালে মৃদুলের সঙ্গে বিয়ে হয় রানীর। ওই সময়ে ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। বছর খানেক তাদের সংসার ভালবাবে চললেও মৃদুলের আচরণ বদলাতে তাকে। স্ত্রীকে নির্যাতন করে আরও ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে সে। বিষয়টি দুই সন্তানের কথা চিন্তা করে পরিবারকে জানায়নি রানী। কিন্তু এক পর্যায়ে বাধ্য হয় জানাতে। আর এ কারনে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে মৃদুল ও তার পরিবারের সদস্যরা। রানীকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনার পথে প্রকৃত ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য হুমকিও দেয়া হয়। বর্তমানে পুলিশের রহস্যজনক আচরণে মামলার কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি। পাশাপাশি ময়না তদন্ত রিপোর্টও টাকার জোরে বদলে ফেলা হতে পারে বলে নিহতের স্বজনরা আশঙ্কা করছেন। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোসীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেছেন।
ঢাকা মেডিকেল ফরেনসিক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেতে আরও বেশকিছুদিন সময় লাগাবে। প্রাথমিক অবস্থায় পোড়া রোগীর অবস্থা থেকে ধরানা করা হচ্ছে তাকে নির্যাতন করে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে চয়নি সূত্রটি।
এবিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালি থানার এসআই বিকাশ চন্দ্র শীল বলেন, এখনো এই মামলায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চরছে। এছাড়া ময়না তদন্ত রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি। রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা গ্রহণ করা হবে।