আজ সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট উপস্থাপন ৪ লাখ কোটি টাকার বাজেটে চালের দাম কমবে তো?
বিশ্বজিৎ দত্ত ও হাসান আরিফ : দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশের মধ্যে বাংলাদেশে চালের দাম সবচেয়ে বেশি।তাও কেনা যেতো যদি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেতো। দেশের ৪০ শতাংশ যুবক বেকার। যদিও সরকার বলছে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। কিন্তু সরকারের ঋণের সঙ্গে উৎপাদন বৃদ্ধির সামঞ্জস্য নেই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঋণ নিচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন নেই। গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলছে রাষ্ট্রিয় বিনিয়োগে উৎপাদন এরপর পৃষ্ঠা ২, কলাম
(প্রথম পৃষ্ঠার পর) বাড়ছে। কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় বসেরকারিখাতে অগ্রগতি নেই। দেশের সাধারণ মানুষ বাজেট বলতেই বোঝে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি। আজ যে বাজেট অর্থমন্ত্রী পেশ করতে যাচ্ছেন তাতে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন চালের দাম কমবে তো।
অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় বলছেন, ব্যাংকের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। সরকার ক্রমাগত বাড়াচ্ছে, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পরিবহনের মূল্য।বৈশ্বিক মূল্য পরিস্থিতিও ভাল নয়। বাড়ছে জ্বালানিসহ পণ্য মূল্য। এই অবস্থায় আগামীতে মূল্যস্ফীতি হাতছানিতো রয়েছেই। মূল্যস্ফীতি এমন একটা রাক্ষস যেকোন সময় অর্থনীতি গিলে ফেলতে পারে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবে। এই বাজেট হবে মহাজোট সরকারের এই মেয়াদের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এই সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। এসময় সরকার একটি অর্ধবাষিক বাজেট পেশ করবে বলে জানা গেছে । এটি যদি হয় তবে ওই বাজেটটি হবে অসম্পূর্ণ।
আজ বেলা দেড়টায় জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ নিয়ে টানা নয়টি এবং মোট এগারোটি বাজেট দিতে যাচ্ছেন তিনি। ৮৪ বছর বয়সী অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেটের শিরোনাম হচ্ছে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের’।
জিডিপি ও মূল্যস্ফীতি
দেশকে মধ্যম আয়ে উন্নতি করার ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ভোক্তাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বাজার স্বাভাবিক রাখতে আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এদিকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের হার বর্তমানের ৩৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে চায় সরকার।
বাজেট অংক
সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। এরই মধ্যে উন্নয়ন বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নসহ এই বরাদ্দ হচ্ছে ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। আর অনুন্নয়ন ব্যয় হতে যাচ্ছে ২ লাখ ৭১৩৮ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। যা টাকার অংকে দাড়াবে ১ লাখ ২৯ হাজার ১০ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হতে পারে ৭৪ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হতে পারে ৪৮ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা, যা মোট ঘাটতির ৩৭ দশমিক ২০ শতাংশ। বাকিটা সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য উৎস থেকে ২৫ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা নেওয়া হবে, যা মোট ঘাটতির ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর বিদেশী উৎস থেকে (নিট) নেওয়া হতে পারে ৫৪ হাজার ২৩০ কোটি টাকা, যা মোট ঘাটতির ৪১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ ধরা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ আকার ২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
রাজস্ব আয়
২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর বাবদ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৮৭ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৫ হাজার ১২৩ কোটি টাকা বেশি। মোট আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এনবিআর কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা।
ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে যা হতে পারে
এনবি আর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে যে, বর্তমানে মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর ও এসি সংযোজন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন হারে ভ্যাট দিতে হয়। স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে এই তিন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখা হতে পারে। এতে দেশে তৈরি মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর ও এসির দাম কমতে পারে।
দেশে তৈরি সফটওয়্যার ক্রয় করলে বর্তমানে ৫ শতাংশ উৎসে ভ্যাট দিতে হয়। এটি আর থাকছে না। এমনকি ওয়েবসাইট তৈরি করে তা সরবরাহ পর্যায়েও ভ্যাট বসার কথা। এর উপরেও ভ্যাট প্রত্যাহার করা হতে পারে। মোটা দাগে দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের সব ধরনের পণ্য বা সেবা সরবরাহের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার হচ্ছে।
এদিকে আন্তনগর ট্রেনে ভ্রমণের টিকিটের ওপর নতুন আইনে ভ্যাট বসার কথা ছিল। এই ভ্যাট প্রত্যাহার হচ্ছে। ট্রেনের টিকেট ক্রয় করলে ভ্যাট দিতে হবে না। তবে এসি সিট বা বাথের টিকিট ক্রয় করলে ভ্যাট দিতে হবে। একইভাবে ৪০ সিটের অনধিক নন-এসি বাসের যাত্রীদের টিকিটের ওপর ভ্যাট দিতে হবে না। তবে এসি বাসের টিকিটে ভ্যাট কাটা হবে। তবে নগর সার্ভিসের এসি বা ননএসি বাসের টিকিটে ভ্যাট থাকবে না। লঞ্চ-স্টিমারে ভ্রমণের টিকিটের ওপর ভ্যাট থাকবে না। এ ছাড়া রোগীদের আনা-নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবার ওপর ভ্যাট বসার কথা থাকলেও তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
বর্তমানে কেবল সরকারি প্রশিক্ষণ সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি আছে। নতুন ভ্যাট আইনে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রশিক্ষণ-কর্মশালার ওপর ভ্যাট তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যে প্রশিক্ষণ সেবা দেয়, সেগুলোতে অংশগ্রহণ করতে যে ফি নেওয়া হয়, তা ভ্যাটমুক্ত থাকবে। তবে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের টিউশন ফিসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ফি এর ওপর ভ্যাট থাকবে। তবে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ফি এর ওপর ভ্যাট নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলা আছে। সেই কারণে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাট আদায় করতে পারবে না এনবি আর। ভোজ্যতেল আমদানি থেকে শুরু করে সরবরাহ ও বিক্রি পর্যন্ত পর্যায়ে ভ্যাট মওকুফ করা হচ্ছে। বর্তমানে তিন পর্যায়ের পরিবর্তে এক পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়।
নতুন আইনে ভ্যাট মওকুফের তালিকায় জীবন রক্ষাকারী ওষুধের তালিকা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আবার কিছু চিকিৎসা যন্ত্রপাতিতেও এ সুবিধা থাকছে। হার্টের রোগীদের অনেক সময় জরুরি ভিত্তিতে রিং পরাতে হয়। এই রিংয়ের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আবার ডায়ালাইসিস করতে কৃত্রিম কিডনি যন্ত্র কেনায় ভ্যাট থাকবে না। তেমনি রক্তের ব্যাগ কিনতেও ভ্যাট দিতে হবে না।
৭৫০ বর্গফুটের কম আয়তনের ফ্ল্যাট কেনায় দেড় শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হতে পারে। আবার জমি কেনার নিবন্ধনের সময় আড়াই শতাংশ ভ্যাটও থাকছে না। এ ছাড়া আগামী অর্থবছর থেকে আমদানি পর্যায়ে যে অগ্রিম ব্যবসায় কর (এটিভি) দেওয়া হয়, তা কাটার ক্ষেত্রে নিয়ম পরিবর্তন করা হচ্ছে। নতুন বছর থেকে পণ্য বা সেবার শুল্কায়নযোগ্য মূল্যের ওপরেই ৩ শতাংশ হারে এটিভি বসতে পারে। এতে করভার কিছুটা কমবে। অন্যদিকে ভ্যাটমুক্ত সীমা এবং টার্নওভার করের পরিধিও বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ৩০ লাখ টাকার পরিবর্তে ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হলে ওই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট দিতে হবে না। টার্নওভার করের পরিধি ৩৬ লাখ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে।
আয়করে পরিবর্তন আসছে
এবার আয়করেও বেশ কিছু বড় পরিবর্তন আসছে। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পৌনে তিন লাখ টাকা করা হচ্ছে। বর্তমানে সোয়া দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে মোট আয়করের ১০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। বাজেটে সারচার্জের আওতায় সীমা আড়াই কোটি টাকা করা হতে পারে। এ ছাড়া তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য আগামী বাজেটে সুখকর নাও হতে পারে। বর্তমানে এই খাতে উৎসে কর দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে আমদানি শুল্ক স্তরে পরিবর্তন আসবে না। তবে কিছু মধ্যবর্তী পণ্যকে কাঁচামালের পণ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক বাড়তে পারে ১ হাজার সিসির কম এবং ২ হাজার সিসির বেশি গাড়িতে। পুরোপুরি আমদানি করা মোটরসাইকেলেও সম্পূরক শুল্ক বাড়তে পারে।
ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ
আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ হচ্ছে ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জন্য কোনো ভর্তুকি রাখা হচ্ছে না। বিশ্ববাজারের তুলনায় অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলে লাভ থাকায় এ খাতে কোনো ভর্তুকি রাখছে না সরকার। তার পরও ঘাটতির পরিমাণ দাড়িয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা।
কর্পোরেট ট্যাক্সে
সূত্র জানায়, কর্পোরেট ট্যাক্সের রেট পরিবর্তন করার উদ্যোগ কথা থাকতে পারে বাজেটে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, তিনি এই বিষয়ে কিছু করতে পারেন নাই, তবে পরিবর্তনের চিন্তা রয়েছে। আমার মনে হয়, এতে অলমোস্ট কিছু হবে না। একটা হয়ত রেট চেইঞ্জ করতে পারি, আই ডোন্ট নো।
তিনি বলেন, এটার একটা অসুবিধা হচ্ছে কি, আমি যদি চেইঞ্জ করি, আই শুড স্টে অ্যারাউন্ড ফর অ্যা লংগার পিরিয়ড, টু রিকুপ দ্য লস অব হোয়াটএভার রিটার্ন। এটা নাই তো।
বিনিয়োগ
বেসরকারি খাতকে আকৃষ্ট করতে বাজেটে নানাভাবে শুল্ক করে ছাড় দেওয়া হবে। কেননা বিনিয়োগের অন্য উপকরণগুলো দুর্বল। আর বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে সেগুলোও সমাধান হয়নি। এখনো বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া, ভ্যাট, টিন নিবন্ধন করতে হয়রানি হতে হয়। পদে পদে রয়েছে দুর্নীতি ও উপরির দৌরাত্ম্য। এসব কারণে বিনিয়োগকারীরা পিছিয়ে রয়েছেন। এসব বিষয়ে দিকনিদের্শনা থাকবে।
তথ্যমতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছর বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ২২.০৭ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা জিডিপির ২১.০৪ শতাংশে নেমে যায়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই বিষয়ে বলেছেন, এ কথা ঠিক যে, আমাদের বেসরকারি বিনিয়োগে খুব একটা গতি আসেনি। কেন আসছে না, সেটার সঠিক কারণ তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল, হরতাল-অবরোধ নেই। বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। তারপরও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না। আর একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, দেশি বিনিয়োগ না বাড়লে, বিদেশি বিনিয়োগও বাড়ে না।
সামাজিক নিরাপত্তা
এদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর প্রায় ৬০ লাখ দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আগামী বাজেটে নতুন ৭ লাখ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এই সংখ্যা বেড়ে হবে ৬৭ লাখ।
চলতি অর্থবছর বয়স্ক ভাতার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে ৩১ লাখ ৫০ হাজার জনকে। আগামী বাজেটে বয়স্ক ভাতা সুবিধাভোগীর সংখ্যা সাড়ে ৩ লাখ বাড়িয়ে ৩৫ লাখ করা হচ্ছে। তারা প্রতি মাসে জনপ্রতি ভাতা পাচ্ছেন। বর্তমানে সাড়ে ১১ লাখ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দেশের অসচ্ছল প্রতিবন্ধী উপকারভোগীর সংখ্যা আসছে বাজেটে ১০ শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সাড়ে ৭ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় রয়েছে। এই সংখ্যা ৭৫ হাজার বাড়িয়ে ৮ লাখ ২৫ হাজার করা হচ্ছে। অবহেলিত জনগোষ্ঠী হিসেবে হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গ) এবং বেদে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে ভাতা ৬০০ টাকা। দরিদ্র্য মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মায়েদের ভাতা ৫০০ টাকা।
অন্যদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বৃত্তির হার প্রাথমিক স্তরে ৫০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৭০০ টাকা এবং উচ্চশিক্ষা স্তরে ১ হাজার ২০০ টাকা। তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫ হাজার করে বাড়িয়ে ৭০ হাজারের স্থলে ৭৫ হাজার করা হচ্ছে। ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্তদের আর্থিক কর্মসূচির বরাদ্দ ২০ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে এটি ৩০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা হচ্ছে। প্রতিজন সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা সাহায্য পাবেন। এছাড়া চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। এক্ষেত্রে খাদ্য সহায়তা দ্রব্যাদি প্রদানের পরিবর্তে উপকারভোগীদের সরাসরি জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা নগদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত