সেন্ট্রাল হাসপাতাল ইস্যুতে মামলা আপস নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে বিভক্তি
রিকু আমির : ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী চৈতির মৃত্যুর অভিযোগে’ ঢাবির পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা আপোষ নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও সরকার সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)- এর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। এসব নেতাদের অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি লেখা পোস্ট করছে, প্রকাশ্যেও কথা বলা হচ্ছে।
বিএমএ’র কিছু নেতা ও তাদের অনুসারীদের অভিযোগ- স্বাচিপের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান কৌশলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সেন্ট্রাল হাসপাতালের পক্ষ অবলম্বন করেছেন, মামলা আপোষে তার ভূমিকা আছে। যেখানে বিএমএর মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী তাদের সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচিতে চিকিৎসকদের উদ্দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন- সেন্ট্রাল হাসপাতালকে বর্জনের ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মামলায় আপোষ করে এ হাসপাতাল চিকিৎসক সমাজের সঙ্গে বেঈমানি করেছে। একইসঙ্গে হাসপাতাল ভাংচুর ও চিকিৎসকদের মারধরের ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএমএ’র বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে স্বাচিপ বর্তমান কমিটির কিছু শীর্ষ নেতার দ্বন্দ্ব বেশ পুরানা। বিএমএ সূত্র জানায়, সেন্ট্রাল হাসপাতাল ইস্যুতে বিএমএ আহূত সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচিতে স্বাচিপের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান একত্মতা পোষণ করে স্বশরীরে অংশ নেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন মামলা প্রত্যাহারের জন্য সেন্ট্রাল হাসপাতালসহ বিএমএ’র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে তখন ডা. ইকবাল আর্সলান বিএমএ নেতাদের মতের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। যেখানে বিএমএ নেতারা মামলা প্রত্যাহারের পক্ষে নন, সেখানে এম ইকবাল আর্সলান ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মামলার বাদি’ এমন অজুহাত তুলে মামলা প্রত্যাহারে সেন্ট্রাল হাসপাতালের পক্ষ নেন। গত ২৪ মে সকাল ১০টার কিছুক্ষণ আগে তিনি সেন্ট্রাল হাসপাতালে মামলা আপোষ নিয়ে সশরীরে আলোচনা করেন সেন্ট্রাল হাসপাতালে বসেই। সেদিন বিকালেই সেন্ট্রাল হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আপোষের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমজাদ আলী। ২৪ মে ইকবাল আর্সলান যখন সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রবেশ করছিলেন এবং বের হচ্ছিলেন তার দুটি স্থির চিত্র এসেছে দৈনিক আমাদের অর্থনীতির কাছে। হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও থেকে স্থির চিত্রগুলি সংগ্রহ করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলানের বলেন, চিকিৎসকদের দাবি আদায়ে স্বাচিপ সব সময়ই বিএমএ’র সঙ্গে লড়াই সংগ্রামে ছিল, আছে ও থাকবে। স্বাচিপ এমন কোনো কাজে কখনই নেই, যে কাজ চিকিৎসকদের স্বার্থে আঘাত হানতে পারে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, যেখানে মেরেছে, রক্তাক্ত করেছে, সেখানে আবার আপোষ কিসের? আজকে করেছে সেন্ট্রালে, কালকে করবে আরেক জায়গায়, পরশু করবে আরেক জায়গায়। এভাবে তো চলতে দেয়া যায় না। এই মামলা বা ঘটনা মিমাংসায় কোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। বিএমএ কর্মসূচি ডেকেছে, চিকিৎসক সমাজ একাত্ম হয়েছে এর সঙ্গে। অতএব যা করার বিএমএ-ই করবে। বিএমএ’র আন্দোলন দেশের সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের জন্য। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ