সিয়াম সাধনার এ মাসে…
আহমদ আবদুল্লাহ
মাহে রমযান আমাদের জন্য হেদায়াতের ভরা মৌসুম। এ মাসেই আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির হেদায়াতের লক্ষে বড় বড় ঐশী গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন। রমযানের শেষ দশদিনের বেজর রাতসমূহের একটি রাত হল ‘লাইলাতুল কদর’। এ লাইলাতুল কদরে প্রিয় নবী (সা.) এর ওপর সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ পবিত্র কুরআন নাজিল করা হয়। আসলে রমযান মাসের শ্রেষ্ঠত্ব, ফযিলত ও গুরুত্ব একমাত্র আল কুরআনের বদৌলতে। মানবজাতির দাম্পত্য জীবনের সঠিক নীতিমালা, উত্তরাধিকার আইন, মৌলিক ইবাদতের নিয়মাবলী, ক্রয়-বিক্রয়, লেনদেন, যুদ্ধ বিগ্রহ, বিচার, আইন, নৈতিক বিধান, রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার সব বিষয়ের মৌলিক বিধান আল কুরআনে সুন্দর করে মহান রাব্বুল আলামিন উল্লেখ করেছেন। পবিত্র কুরআন সর্বপ্রথম কদরের রাতে নাযিলের পর রাসুল (সা)- এর ওপর মক্কি জীবনীতে ও মাদানি জীবনীতে দশ বছর মোট বাইশ বছর পাঁচমাস চৌদ্দ দিনে সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশী গ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ হয়। মানবজীবন সব সমস্যার সমাধান পবিত্র কুরআনে রয়েছে। তাতেই রয়েছে মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ধর্ম বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, নীতি বিজ্ঞান, সৌর বিজ্ঞান, দর্শন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইত্যাদি সব বিষয়ের বিস্তর বিবরণ একমাত্র শাশ্বত মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআনে রয়েছে। রমযান শব্দের আভিধানিক অর্থ জ্বালিয়ে দেওয়া, পুড়িয়ে দেওয়া। প্রকৃতপক্ষে মহান রাব্বুল আলামিনের ভালোবাসায় রোজা আদায়ের মাধ্যমে জীবনের সকল অশ্লীল আচরণ, হিংসা বিদ্বেষ, ক্রোধ, প্রবৃত্তি ও পাশবিক প্রবণতাকে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে, আত্মসংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং মানবিক বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যই হল সিয়ামের মূল শিক্ষা। পবিত্র কুরআনে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘রমযান মাস হচ্ছে এমন একটি মাস, যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। আল কুরআন হচ্ছে মানবজাতির জীবন পথের দিশা ও সুস্পষ্ট প্রামাণ্য হিদায়াত, হক ও বাতিলের পার্থক্য নির্ণয়কারী মানদ-। তোমাদের মধ্যে যে এ মাসটি পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। আর যে অসুস্থ অথবা সফররত থাকবে, সে যেন পরবর্তী কোন এক সময় গুণে গুণে তা আদায় করে নেয়। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজতর করতে চান, তিনি তোমাদের জন্য কঠিন করতে চান না। তোমরা গণনা করে পূর্ণভাবে রোজা আদায় কর আর আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্ব প্রকাশ কর। আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে পরিপূর্ণ হেদায়াত দিয়েছেন, যাতে তার কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পার।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫) উল্লেখিত আয়াত দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, রমযান মাসে কুরআনে অবতীর্ণের মাধ্যমে পরিপূর্ণ জীবনের হেদায়াত প্রদানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনকে সামনে রেখে প্রদত্ত জীবন বিধান বাস্তবায়ন এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব মহত্ত্ব ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া আদায়ের তাকিদ করা হয়েছে। সুতরাং যে মুসলিম জনগোষ্ঠী কেবল সুনির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত পানাহার, খারাপ কথাবার্তা ও অশ্লীল কার্যাদি হতে বিরত থাকে অথচ ইসলাম বিরোধী কুশিক্ষা, বর্বরতা, মাদকাসক্তি, ব্যভিচার, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, খুন-খারাবী, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতিহিংসা, অসভ্যতা, ইত্যাদি ঘৃণ কার্যাদি হতে নিজেদের পূর্ণরুপে বিরত রাখে না, তাদের সিয়াম সাধনা কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে তাদের কোন প্রতিদান নেই। আল কুরআনে শুধু রোজাকে ফরয করা হয়নি, বরং হত্যা, সন্ত্রাস ও ধর্ষণমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কিসাসের বিধান প্রতিষ্ঠা করা এবং মহান রাব্বুল আলামিনের পরিপূর্ণ দীন কায়েম করাকেও ফরয করা হয়েছে।