ইতিহাসের আলোকে মাহে রমজান
মাহফুয আহমদ
হিজরি সনের নবম মাস রমজানুল মোবারক বৎসরের শ্রেষ্ঠতম মাস। এটা বৎসরের একমাত্র মাস; যা কোরআনে কারিমে উল্লিখিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘রমজান মাস- যে মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে, যা আদ্যোপান্ত হিদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নির্দেশনাবলী সম্বলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়। (সূরা আল বাকারা: ১৮৫) তা ছাড়া এই মাস আরো অনেক কারণে বৈশিষ্ট্য ম-িত। এ মাসেরই একটি রাত ‘লাইলাতুল কাদর’ নামে অভিহিত- কোরআনে কারিমে যার আলোচনা এভাবে করা হয়েছে, ‘শবে কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ (সূরা আল কাদর: ৩)
এখানে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে রমজান সংশ্লিষ্ট বিক্ষিপ্ত কিছু তথ্য পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা হলো: ১ লা রমজানে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ওপর সহিফা অবতীর্ণ হয়, ৬ রমজানে হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ওপর ‘তাওরাত’ অবতীর্ণ হয়, ১৩ রমজান হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের ওপর ‘ইঞ্জিল’ অবতীর্ণ হয়, ১৮ রমজান হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের ওপর ‘জাবুর’ অবতীর্ণ হয়, ২৪ রমজান সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘আল কোরআনুল কারিম’ অবতীর্ণ হয়। (সূরা আল বাকারা: ১৮৫, সহিহ মুসলিম: ১১৬২)।
রমজান মাসেই ইসলামের অন্যতম বিধান যাকাত ফরজ হয়। জিহাদের হুকুমও রমজান মাসে অবতীর্ণ হয়। ২য় হিজরির ১৭ রমজান বদর প্রান্তরে ঈমান ও কুফরের মধ্যকার পার্থক্যকারী সেই মহান গাজওয়া (যুদ্ধ) সংগঠিত হয়। ২য় হিজরিতে বদর থেকে ফিরে ২৫ রমজান আসমা বিনতে মারওয়ানকে হত্যার অভিযান পরিচালিত হয়; যে মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দিত, গালিগালাজ করত, তাঁর বিরুদ্ধে কবিতা রচনা করত, বিভিন্নভাবে মুসলমানদের বিরোধিতা করত এবং তাদের বিরুদ্ধে লোকদের উস্কানি দিত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসেই হজরত জয়নব রাযি.কে বিবাহ করেন। রমজান মাসেই হজরত আয়িশা রাযি.’র ওপর আরোপিত মিথ্যা অপবাদের আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর নির্দোষিতা ও দায়মুক্তির ঘোষণাপবিত্র কোরআনে অবতীর্ণ হয়। ৮ম হিজরির ১৩/২০ রমজান মহান মক্কা বিজয় হয়। এ মাসেই মুশরিকদের উপাস্য ‘উযযা’ ধ্বংস করার জন্যে হজরত খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রাযি.’র নেতৃত্বে বাহিনী প্রেরণ করা হয়। ‘সুওয়া’ মূর্তি ধ্বংস করার জন্যে হজরত আমর ইবনুল আস রাযি.’র নেতৃত্বে আরেকটি বাহিনী পাঠানো হয়। গাজওয়ায়ে তাবুকও রমজান মাসে সংগঠিত হয়।
প্রচ- গরম ছিল। ক্ষুধার্ত অবস্থায় উত্তপ্ত গরম সহ্য করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরাম জীবনবাজি রেখে শত্রুর মোকাবেলা করেছেন এবং আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানিতে মুসলমানগণ বিজয় লাভ করেন। হজরত খাদিজা রাযি. এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরর চাচা আবু তালিব মৃত্যু বরণ করেন রমজান মাসেই। তাছাড়া এই রমজান মাসে হজরত ফাতিমা রাযি., হজরত রুকাইয়া রাযি., হজরত আয়িশা রাযি., হজরত খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রাযি. ইন্তিকাল করেন। আমিরুল মু’মিনিন হজরত আলি রাযি. রমজান মাসেই শাহাদাত বরণ করেন।