রমজান মাস কেন শ্রেষ্ঠ?
বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী পবিত্র কুরআন অবতীর্ণের মাস রমজান। তাকওয়া অর্জনের মাস। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, এই সেই রমজান মাস, যাতে বিশ্বমানবের হেদায়েতের জন্য কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সুরা বাকারা : ১৮৫)
এই মাসের সিয়ামকে আল্লাহ তায়ালা ফরয করেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে সে যেন সিয়াম পালন করে। (সুরা বাকারা :১৮৫)
তালহা বিন উবাইদুল্লাহ বলেন, এক ব্যক্তি নবী সা. কে জিজ্ঞাসা করল; হে আল্লাহর রাসূল! আমার উপর আল্লাহ কি কি রোজা ফরজ করেছেন তা আমাকে বলে দিন” উত্তরে তিনি বললেন, ‘রমজান মাসের রোজা’ লোকটি বলল, এ ছাড়া অন্য কিছু কি আমার কর্তব্য আছে? তিনি বললেন, না, তবে যদি তুমি নফল রোজা রাখ, তাহলে ভিন্ন কথা।’ (বুখারী : ১৮৯১)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য এ মাসের সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। সুনানে নাসায়ী
ফলে ফরজ সিয়াম রমজান মাসে হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা আরও অনেকগুণে বেড়ে গেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে তোমরা খোদাভীরু হতে পার। সূরা বাকারা : ১৮৩
এই মাস আগমন হলে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হয়ে সাহাবাগণকে সুসংবাদ দিতেন, তিনি বলতেন, তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। (নাসায়ী)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন; যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল, সালাত কায়েম করল, যাকাত আদায় করল, রমজান মাসে সিয়াম পালন করল, তাঁর জন্য আল্লাহর উপর সে বান্দার অধিকার হল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেয়া। (বুখারী)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। (মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। (বাযযার, সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব : ৯৮৮, মুসনাদ আহমদ : ৭৪৫০)
এই মাসের প্রতি রাতে ও দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। (সহিহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, মুসনাদ আহমাদ : ৭৪৫০)
এ মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়, যেমন হাদিসে এসেছে যে, রমজান মাসে ওমরাহ করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বরং, রমজান মাসে ওমরাহ করা আল্লাহর রাসূলের সাথে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। এমনিভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল সৎকাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেশি দেওয়া হয়।
এ মাসে আমলের দ্বারা অনেক বেশি মুনাফা লাভ করা যায়। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারী মহিলাকে বললেন, তুমি কেন আমাদের সাথে হজ্ব করতে যাও নি? তিনি বললেন, আমাদের পানি বহনকারী দুটি মাত্র উট রয়েছে। একটিতে আমার ছেলের বাবা (স্বামী) ও তাঁর ছেলে হজ্ব করতে গিয়েছেন, অন্যটি পানি বহনের জন্য আমাদের কাছে রেখে গিয়েছেন। তিনি বলেন, রমজান মাস এলে তুমি উমরা করবে। কেননা এ মাসের উমরা একটি হজ্বের সমতুল্য।
সহীহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রমজান মাসের উমরা একটি হজ্বের সমতুল্য। অথবা বলেছেন, আমার সাথে একটি হজ্বের সমতুল্য (সওয়াবের হিসাবে)। সহীহ বুখারী, হাদীস, ১৭৮২, সহীহ মুসলিম-১২৫৬, মুসনাদে আহমদ, হাদীস-২০২৫
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, উম্মে মাকিল রা. বলেন-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো হজ্ব করতে ইচ্ছুক। কিন্তু আমার উটটি দুর্বল। তিনি বললেন, তুমি রমজান মাসে উমরা করো। কেননা রমজান মাসে উমরা (সওয়াব হিসেবে) হজ্বের সমতুল্য। মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২৭২৮৫
যড়সধঁহধুঁন@ুধযড়ড়.পড়স