রমজান, ত্যাগ ও আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ
ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন
আল্লাহ পাক যখন রোজা জারি করেছেন অর্থাৎ যে দলিল বা আয়াতে রোজা ফরজ করা হয়েছে তা হলোÑ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যে রকম তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের উপর ফরজ করা হয়েছিল। এ কারণেই যাতে তোমরা পরহেজগার হতে পারো। রোজার বিধান জারি করার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ যেন পরহেজগার এবং খোদাভীতি অর্জন করতে পারে।
শুধু পানাহার, পাপাচার, কামাচার পরিত্যাগ করার নামই রোজা নয়। যদি মানুষ পানাহার, কামবৃত্তি, পাপাচার পরিত্যাগ করল না তাহলে এটা যথাযথভাবে রোজা হলো না। এজন্য রাসুল (সা.) হাদিসে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি মাহে রমজানে মিথ্যা এবং ধোঁকাবাজি ছাড়তে পারল না তার রোজা রাখা আর পানাহার বর্জন করার কোনো দরকার নেই। পবিত্র মাহে রমজান হলো প্রশিক্ষণের মাস। এই প্রশিক্ষণ শুরু হয় সুবহে সাদেক থেকে শুরু করে সূর্যাস্তের পর্যন্ত। এই প্রশিক্ষণের মূল কারণ কিছু খাওয়া যাবে না, খারাপ কিছু বলা যাবে না, কোনো কিছু ধরা ছোঁয়া যাবে না। যেমন সামনে সুস্বাদু খাবার আছে, আল্লাহ পাকের হুকুম নেই বিধায় ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত তারপরও খাওয়া যাবে না। অনুরূপভাবে আপনার ঘরে বৈধ স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আপনার যৌন তাড়না থাকা সত্ত্বেও আপনি বিরত থেকেছেন একমাত্র আল্লাহর বিধানের কারণে। এক মাসের এই প্রশিক্ষণ যদি আমরা যথাযথভাবে পালন করতে পারি তাহলে পরহেজগার হতে পারব এবং বাকি এগারো মাস সেই পরহেজগার নিয়ে চলতে পারব।
পবিত্র মাহে রমজান এলেই ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেন, এটি আসলে সঠিক নয়। মানুষকে ধোঁকা দেওয়া, পণ্য আটকে রাখা বা চাহিদা অনুযায়ী দ্রব্য না পাওয়া প্রতারণামূলক আচরণ মানুষের সঙ্গে। ইসলাম কখনোই এমন আচরণ গ্রহণ করে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, হাটে বাজারে অনেক রোজাদার পাওয়া যাবে অর্থাৎ সব জায়গায় রোজাদার আছে কিন্তু রোজার দ্বারা এরা শুধু ক্ষুধার্ত রইল, এরা এর জন্য কোনো প্রতিদান বা সওয়াব পাবেন না কারণ রোজা রেখে তারা অন্যায়, অশ্লীল এবং গুনাহের কাজ থেকে, ধোঁকাবাজি থেকে, মিথ্যা থেকে বিরত হতে পারল না। এজন্য শুধু রোজা রাখলেই হবে না, আল্লাহর বিধান আমাদের অনুসরণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী চলতে হবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত গ্রহণ: ফাতেমা-তুজ-জোহরা
সম্পাদনা: আশিক রহমান