জলবায়ু চুক্তি, কোণঠাসা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
ডেস্ক রিপোর্ট : ভারত এবং চীনে দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে যথেষ্ট কড়া হতে পারেনি প্যারিসের জলবায়ু চুক্তি। আমেরিকার স্বার্থও ভালভাবে রক্ষিত হয়নি, ওবামা সরকার এত খারাপভাবে রফা করেছিল। এই অজুহাত দিয়ে প্যারিস চুক্তি থেকে আমেরিকাকে বের করে নিয়ে এলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বললেন, বাধ্য হলাম। মার্কিন নাগরিকদের মুখ চেয়ে এছাড়া উপায় ছিল না। আমেরিকা এবার নতুন করে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির শর্ত নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। দেখা হবে, যাতে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে। যদিও আমেরিকা এখনই প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসতে পারার কথা নয়। নিয়ম অনুসারে, চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চার বছর সময় নিতে হবে। আজকাল
ওবামা সরকার যে চাপে পড়ে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে সই করেছিল, তিনি ক্ষমতায় এলেই যে আমেরিকা এই চুক্তি থেকে সরে আসবে, সেটা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময়ই বলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি অভিযোগ তুললেন, এই চুক্তিতে চীন এবং ভারতের মতো দেশকে সুবিধে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারত যেমন উন্নত বিশ্বের দেশগুলি থেকে বহু’শো কোটি ডলার ভর্তুকি পাওয়ার বিনিময়ে এই চুক্তিতে সামিল হয়েছে। ভারতকে এবং চীনকে ছাড় দেওয়া হয়েছে দ্বিগুণ পরিমাণ কয়লা খনি থেকে তোলার, ব্যবহার করার। যার দরুন আমেরিকা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত অসুবিধেজনক জায়গায় চলে গেছে। যার দরুন বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে আমেরিকা। এটা ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ের অন্যায়’, বলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যদিও বিশ্বের মোট ১৯০টি দেশ প্যারিস চুক্তিতে সামিল হয়েছে। বাদ ছিল একমাত্র সিরিয়া এবং নিকারাগুয়া। ট্রাম্প তার সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নিজেই ফোন করেছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো-কেও।
কিন্তু আমেরিকার এই পুরনো বন্ধুরাও অত্যন্ত চাঁচাছোলা ভাষায় ট্রাম্পকে বুঝিয়েছেন, যা করলেন ভুল করলেন। জার্মানি এমন কথাও বলেছে যে, আমেরিকা সারা পৃথিবীর ক্ষতি করছে। এটা একটা গুরুতর ভুল সিদ্ধান্ত, বলেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জাঁ ক্লদ ইউঙ্কের। হোয়াইট হাউসের অন্দরমহলের খবর, প্রেসিডেন্টের ছায়াসঙ্গী ইভাঙ্কা ট্রাম্পও নাকি বাবাকে বারণ করেছিলেন। বলেছিলেন, শুধু জলবায়ুর ক্ষতি নয়, আমেরিকার ভাবমূর্তিরও ক্ষতি হবে। আন্তর্জাতিক উদ্যোগে আমেরিকার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এক ঝাঁক বহুজাতিক সংস্থাও ট্রাম্পের কাছে আর্জি জানিয়েছিল, আমেরিকা যাতে প্যারিস চুক্তি থেকে সরে না আসে। এদের মধ্যে যেমন বিপি-র মতো বড় তেল সংস্থা আছে, তেমনি আছে দুপোঁর মতো বিরাট কৃষি-রাসায়নিক সংস্থা, গুগল, ইন্টেল এবং মাইক্রোসফট। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বাণিজ্যিক গোষ্ঠী টেসলা এবং স্পেস-এক্স সংস্থার প্রধান ইলন মাস্ক, ডিজনি শিল্পগোষ্ঠীর প্রধান রবার্ট ইগর জানিয়েছেন, তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাণিজ্য পরিষদের কোনও বৈঠকে আর অংশ নিতে চান না। কারণ দূষণ সমস্যা কোনও কল্পিত বিপদ নয়। প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা আমেরিকা, বা গোটা বিশ্ব, কারও পক্ষেই মঙ্গলজনক নয়। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ