দিয়াবাড়ি-রূপগঞ্জের অস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের! অস্ত্রের উৎস, গন্তব্য ও বাহকের সন্ধানে মাঠে একাধিক সংস্থা
ইসমাঈল হুসাইন ইমু ও মাসুদ আলম : রূপগঞ্জের একটি খাল থেকে রকেট লঞ্চার গ্রেনেডসহ বিপুল পরিমান গোলাবারুদ উদ্ধারের পর নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এর উৎস, গন্তব্য ও ব্যবহার নিয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমেছে। পাশাপাশি পুলিশ ও র্যাব বিভিন্ন সূত্র কাজে লাগাচ্ছে। এর আগে গতবছর জুনে তুরাগ দিয়াবাড়ি এলাকার একটি খাল থেকেও বিপুল পরিমান অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল। দীর্ঘ তদন্তে ওই অস্ত্রের মালিক সরবরাহকারি বা বহনকারিকে খুঁজে পায়নি। ওই ঘটনায় এখনো ধরাও পড়েনি কেউ। বর্তমানে ওই ঘটনায় করা তিনটি জিডির তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি)। সিটিটিসি প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর দিয়াবাড়িতে যেসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল, তার সঙ্গে রূপগঞ্জের ঘটনার মিল আছে। দুটি স্থানে একই কৌশলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুকিয়ে রাখা হয়। একই চক্র এর পেছনে সক্রিয় থাকতে পারে। তবে জঙ্গি সম্পৃক্তা আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কেন কে বা কারা কী কারণে এসব অস্ত্র রূপগঞ্জের খালে মজুদ করেছিল তা নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। এক মাদক ব্যবসায়ীকে প্রেফতারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অস্ত্রের চালানের সন্ধান মিলেছে। ওই মাদক ব্যবসায়ী আড়ালে আর কী কী ধরনের অপরাধে জড়িত তা নিয়ে তদন্ত চলছে।
একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণত বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় যে ধরনের এক্সপ্লোসিভ ইমপ্রোভাইজড ডিভাইস (আইইডি), গুলি, গ্রেনেড পাওয়া গেছে রূপগঞ্জের খাল থেকে উদ্ধার অস্ত্রের সঙ্গে তেমন কোনো মিল পাওয়া যায়নি। রূপগঞ্জে উদ্ধার অস্ত্র সক্রিয় থাকলেও বেশ পুরনো বলেই মনে করছেন তারা। তবে ধারণা করা হচ্ছে কোনো বিচ্ছিন্নবাদী সংগঠন বড় ধরণের কোনো নাশকতার জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ গুলো মজুদ করেছিলো। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ গুলো সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে আনা হয়েছিলো। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার শরিফ খান নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর বাসা থেকে প্রথম একটি এসএমজি উদ্ধার করা হয়। পরদিন আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তাকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা অস্ত্র উদ্ধারের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী শরিফের জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, অস্ত্রের ধরণ দেখেই বোঝা যায় এসব অস্ত্র কোথায় পাঠানো হচ্ছিল। রকেট লঞ্চার, টাইম ডিভাইস, ওয়াকিটকি বা এসএমজি সাধারণ সন্ত্রাসী বা ক্যাডাররা ব্যবহার করে না। এসব ব্যবহৃত হয় সাধারণত দুর্গম অঞ্চলে আত্মগোপনে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো।
ডিএমপির উত্তরা জোনের ডিসি বিধান ত্রিপুরা বলেন, দিয়াবাড়ির লেক থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। তবে তিনটি জিডি হয়েছিল যা তদন্ত করছে সিটিটিসি। এসব অস্ত্র জঙ্গি ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের হতে পারে বলে ধারণা তার।