ইউনূসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি বিশিষ্টজনদের ইউনূস ইস্যুতে হিলারির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রভাব খাটানোর অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির বিচার বিভাগীয় সিনেট গত সপ্তাহেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে দেরিতে হলেও মার্কিন সিনেটের এই তদন্ত কাজের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, একজন নোবেল বিজয়ী হয়ে ইউনূস নিজ দেশের বিষয়ে নাক গলাতে বিদেশিদের যুক্ত করেছেন। এটা অন্যায়। তার বিরুদ্ধে এই ইস্যুতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ড. ইউনূস যদি সত্যিই নির্দোষ হতেন তাহলে তিনি তদন্ত বন্ধ করতে বিদেশি প্রভাবশালী বন্ধুকে দিয়ে সরকারকে চাপে ফেলার চেষ্টা করতেন না। মার্কিন সিনেটের তদন্তে বিষয়টি বেরিয়ে এলে জনগণ বুঝবে ইউনূস কতটা রাষ্ট্রবিরোধী মানুষ।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, যত বন্ধুই হোক একটি স্বাধীন দেশের তদন্তে প্রভাব খাটাতে পারে না অন্য কোনো দেশ। সরকারের পক্ষ থেকে মার্কিন সিনেটের এই তদন্ত মনিটরিং করা দরকার। ইউনূসের বিষয়ে কেন তাদের এত আগ্রহ ছিল? এর পেছনে আর কী কী ষড়যন্ত্র রয়েছে তা-ও বেরিয়ে আসবে। খুঁজে বের করতে হবেÑ ইউনূসের সঙ্গে দেশের আর কারা যুক্ত রয়েছেন?
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ড. ইউনূস বাংলাদেশে একজন অজনপ্রিয় ব্যক্তি। তার এই নোবেল অর্জন নিয়েও অনেক নেতিবাচক কথা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। সেই তদন্ত বন্ধ করতে তিনি হিলারির প্রভাব খাটিয়েছেন। আমরা আশা করি মার্কিন সিনেটের তদন্তে সবকিছু পরিষ্কার হবে। ইউনূসকে বাঁচিয়ে কী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল ইউনূস গংরাÑ তা জানা জরুরি।
জানা গেছে, বাংলাদেশের এই স্বাধীন তদন্তে হিলারি তার অবস্থান থেকে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছিলেন কি না, সে বিষয়ে দেশটির বিচার বিভাগীয় সিনেট কমিটি দীর্ঘদিন পর এই তদন্ত শুরু করল। সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান চাক গ্রাসলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসনকে হিলারির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু করতে বেশ কিছু বিষয়ে তথ্য চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন।
গত ১ জুন লেখা ওই চিঠিতে গ্রাসলে আগামী ১৫ জুনের মধ্যে অনেকগুলো প্রশ্নের জবাব চেয়েছেন। এতে ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন দূতাবাসের উপ-প্রধান জন ডানিলোউইক যাতে কমিটির কর্মকর্তাদের কাছে সাক্ষাৎকার দেন, সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা ওই চিঠির শুরুতে সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান বলেছেন, হিলারি ক্লিনটনের ফাউন্ডেশন ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ’-এর (সিজিআই) দাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দুর্নীতির তদন্ত থেকে বাদ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ আছে তৎকালীন পররাষ্ট্রন্ত্রী ক্লিনটন ও তার স্টাফদের বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, ওই চিঠিতে বলা হয়, তদন্ত থেকে ইউনূসকে বাদ দিতে পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হুমকি দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, যদি তিনি তদন্ত ঠেকাতে তার মায়ের ওপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা না করেন তাহলে মার্কিন আর্থিক হিসাব তদন্ত (আইআরএস) তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ এনে অর্থ-সম্পদের তদন্ত করবে।
গত ১১ মে শেখ হাসিনা নিশ্চিত করেছেন যে, ২০১১ সালের মার্চে হিলারি ক্লিনটন তাকে ফোন করেছিলেন। এসময় হিলারি দাবি জানিয়ে বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে ইউনূসকে পুনর্বহাল করতে হবে। নতুন এই তথ্য-উপাত্ত ও বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে দানের বিষয়টি অনুকূল হিসেবে কাজ করেছে।
চিঠিতে বলা হয়, বিল ক্লিনটন যখন আরকানসাসের গভর্নর ছিলেন তখন থেকেই হিলারির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে ইউনূসের। এক দশক ধরে হিলারির এই ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও দেখা যায় ইউনূসকে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, হিলারি ক্লিনটনের স্বামী বিল ক্লিনটন নোবেল কমিটির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে তদবির করেছিলেন এবং ২০০৬ সালে ইউনূস শান্তিতে নোবেল পান। ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভে এক লাখ থেকে আড়াই লাখ ডলার দান করে ইউনূসের কোম্পানি। এছাড়া ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে ২৫ হাজার থেকে ৫০ ডলার দেন ইউনূস।
সজীব ওয়াজেদ জয় এ ব্যাপারে মার্কিন গণমাধ্যম ডেইলি কলারকে বলেছিলেন, ইউনূসের বিরুদ্ধে কমিশনের তদন্ত আটকাতে তার মায়ের ওপর প্রভাব খাটাতে ২০১০ এবং ২০১২ সালের মাঝে বারবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। ২০১৩ সালের শুরুর দিকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে কমিশন। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী