বিএনপির ভিশন- ২০৩০ এবং ‘রংধনু’ জাতি
মো. আবদুল কুদ্দুস
বিএনপির জাতি গঠনের মতবাদ নিয়ে আগেও যেমন সমালোচনা ছিল এবারও নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তাদের ভিশন মোতাবেক আগামীতে বাঙালি জাতি ‘রংধনু জাতি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে এই ‘রংধনু জাতি’ কেমন হবে তার কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই এই ভিশনে। কারণ ভিশন ২০৩০ ঘোষণার প্রথম দিকে দলটি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির কথা জোর দিয়ে বললেও এর ১০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলেছে ‘সকল মত ও পথ’-কে নিয়ে ‘রংধনু জাতি’ গঠনের কথা। তাই এখানে প্রশ্ন থেকেই যায় জঙ্গিবাদের মদতদাতা ও যুদ্ধপরাধীদের নিয়ে এমন একটি জাতি গঠন করা হবে কিনা যাদের দেশপ্রেম ও মানবতাবোধ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগেই অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে? বিএনপি বলেছে ৩এ এর সমন্বয় ঘটিয়ে অর্থাৎ এড়ড়ফ ঢ়ড়ষরপু, এড়ড়ফ এড়াবৎহধহপব ধহফ এড়ড়ফ এড়াবৎহসবহঃ এর মাধ্যমে দেশে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। এটি তারা কীভাবে ঘটাবেন? যেহেতু বিগত দিনে তাদের দল বিভিন্ন সময় মানুষ পুড়িয়ে, মানুষ হত্যা করে ক্ষমতার মসনদে বসবার জন্য ব্যস্ত থেকেছে। ধরে নিলাম যে, বিএনপির ঘোষিত ৩৫টি বিষয়ে মোট ২৫৬ অনুচ্ছেদের পরিকল্পনা একটি রাজনৈতিক ভিশন ২০৩০ এবং এটি একটি কল্পিত উন্নয়ন ঝঃধহফধৎফ। কিন্তু এ ঝঃধহফধৎফ বাস্তবায়নে কোনো পন্থা বা চৎড়পবফঁৎব অনুসরণ করে বাস্তব রূপ প্রদান করা হবে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। এর জন্য দরকার কীভাবে অগ্রসর হতে হবে তার একটি কম্প্রেহেনসিভ তত্ত্ব। অন্যথায় কাজটি সহজ হবে না। কেননা ক্ষমতার বাইরে থেকে ২৫৬টি অনুচ্ছেদের দুই-একটি বাদে আর কোনো বিষয় নিয়ে এর আগে তাদেরকে রাজপথে আন্দোলন করতে দেখা যায়নি।
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দল জনগণকে স্বপ্ন দেখাবে এটি খুবই স্বাভাবিক। যেমন ব্রিটেনে অনুষ্ঠিতব্য পার্লামেন্ট নির্বাচনে (৮ জুন, ২০১৭) লেবার পার্টির নেতা জেরমি করবিন-এর দলীয় সেøাগান রাখা হয়েছে ‘ঠড়ঃব খধনড়ঁৎ ভড়ৎ ঞযব সধহু, ঘড়ঃ ঃযব ভব’ি। লেবার পার্টির এই মূলমন্ত্র ব্রিটেনের জনগণকে নানাভাবে তাড়িত করবে বলে আশা করা যায়। তাই বলতে চাই, বিএনপির এই ভিশন অবশ্যম্ভবীভাবে ২০১৯, ২০২৪ ও ২০২৯ এভাবে বিভক্ত করে দিলে এটি দীর্ঘমেয়াদে যেমন ভালো হতো, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত পরিকল্পনা স্বল্প মেয়াদেও কার্যকারিতা বাড়ত। পরিকল্পনাসমূহে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঈড়ৎৎবপঃরাব ধপঃরড়হ নেওয়াও সুবিধা হতো। আবার পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ ভিশন আরও বেশি কার্যকরি হতো। পরিশেষে বলা যায়, বিএনপি হোক আর আওয়ামী লীগ হোক বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে এখন দরকার ‘জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞা’র পূর্ণ চর্চা করা। ১৯৬০ এর দশকে পৃথিবীতে ‘তত্ত্ব’ ও ৮০-এর দশকে ‘তথ্য’ বিষয়ক ব্যাপক চর্চা হয়েছে। এরপর ১৯৯০-এ কম্পিউটার অ্যাডেড সফটওয়্যার আবিষ্কৃত হওয়ায় এখন ‘জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞা’ চর্চা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।। মানুষ, প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়ার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় করায় হলো জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞা’র যথার্থ চর্চা। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে এর মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে, ‘উড়রহম ঃযব ৎরমযঃ ঃযরহমং’ ৎধঃযবৎ ঃযধহ ‘উড়রহম ঃযব ঃযরহমং ৎরমযঃ’। কারণ, যে পদ্ধতি গতকাল কাজ করেছে, আগামীকাল তা কাজ করতে সক্ষম নাও হতে পারে। তাই শুধু বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ নয়, জনকল্যাণে দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে এই প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়ার জন্য অনুরোধ রইলো। (শেষ)
লেখক: শিক্ষক, বিজনেস স্টাডিজ বিভাগ ও সহকারী প্রক্টর, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী
সম্পাদনা: আশিক রহমান