পাহাড়ে সংঘাত : শেখ হাসিনার শান্তি প্রচেষ্টা নস্যাতের ষড়যন্ত্র
মিল্টন বিশ্বাস
পার্বত্য চট্টগ্রামের কয়েক হাজার কিলোমিটার রাস্তার অর্ধেকের বেশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মিত। নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক বান্দরবানের নীলগিরিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের যেসব স্পটে ছুটে যান তার পুরো অবদানটাই সেনাবাহিনীর। নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ ও রাস্তা নির্মাণ না করা হলে রাত্রিযাপন করে নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করা দূরের কথা, সেখানে কেউ যাওয়ার কল্পনাও করতেন না। বর্তমানে অপহরণ একেবারেই শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে ভারতের সঙ্গে পুনরায় সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রামের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সমাপ্তি ঘটে। বলাবাহুল্য, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সহাবস্থানের রাজনীতি। শেখ হাসিনার রাজনীতি সুবুদ্ধি দিয়ে টিকে থাকার রাজনীতি। হিংসা, বিদ্বেষের রাজনীতি, ধর্মের রাজনীতি চালু করে গেছেন মরহুম জিয়াউর রহমান, তা চালু রেখেছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি, জামায়াতের হিংসাত্মক, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথ থেকে বের হয়ে আসার সময় অনেক আগেই তৈরি করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিন. এ কথা সত্য পাহাড়িরা সহজ-সরল ও শান্তিতে বসবাসে বিশ্বাসী। পার্বত্য এলাকার অফিস-আদালতে পাহাড়িরা যেমন তাদের জাত ভাইদের সবসময় উপকারে এগিয়ে আসে না বরং ঘুষ ছাড়া চাকমা অফিসাররা কাজ করে না; তেমনি বাঙালি জনগোষ্ঠীর দখলদারি মনোবৃত্তি কোনো স্বস্তির বাতাস সেখানে আনতে পারেনি। কেবল লংগদু নয় পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতে আগুনে দগ্ধ হয়ে মরেছে অসহায় উপজাতির বহু মানুষ। সাম্প্রদায়িক আচরণে, নারী নির্যাতনে তারা এখন আর বাঙালিদের সহজে বিশ্বাস করতে চায় না। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আদর তঞ্চঙ্গ্যা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পুড়ে জ্বলছে রাঙামাটির লংগদু উপজেলা! অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ…অনিশ্চিত আমাদের জীবন! প্লিজ চোখ খুলুন, এগিয়ে আসুন…।’ আদর আরও লিখেছেন, জাতির সঙ্গে যারা প্রতিনিয়ত বেঈমানি করছে, প্রজন্মের প্রতিটি প্রাণের সঙ্গে যারা ছিনিমিনি খেলছে, যারা ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার দিকে ফেলে দিচ্ছে, সেই সব দালাল দুমুখো সাপদের আগে মেরে ফেলতে হবে, মেরে একদম মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। নেতা আপনাকে বলছি… একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন। শুধু চেয়ারে বসে থাকলে নেতা হওয়া যায় না, সবাই নেতা হতে চাই তবে ভাল সফল নেতা হয় কয় জন? নেতা হতে ভাল নেতৃত্বের গুণাবলি লাগে। লাগে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সঠিক নির্দেশ, নিপুণতা, ভিশন ও মোটিভেশন, যা আপনাদের কাছ থেকে আমরা পাই না। ভাল নেতা কখনো ব্যর্থ হয় না, একজন ভাল নেতাকে সবাই আদর্শ মানে। যেমনÑ মাহাত্মা গান্ধী, মাও সেতুং।’ আদরের কথার সূত্র ধরে বলা যায় সঠিক নেতৃত্বই পারে পাহাড়ে শান্তি আনতে। শেখ হাসিনা সেই কাজই করছেন অনেক আগে থেকে।
তবে সংবাদপত্র জুড়ে অসহায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পলায়ন দৃশ্য আর বাঁশের সেতু পেরিয়ে অজানা পথে এগিয়ে যাওয়া শিশুদের করুণ মুখচ্ছবিÑ বেদনাবহ দৃশ্যগুলো মানুষ হিসেবে, রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক নীতির প্রচারক হিসেবে আমাদের ব্যর্থতাকে চিহ্নিত করে। সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হলে পাহাড়ি-বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। তা না হলে শেখ হাসিনার শান্তি প্রচেষ্টাও সফলতার মুখ দেখতে পাবে না। বারবারই তার সকল সদিচ্ছা পাহাড়ি রাজনীতির হীন স্বার্থের কাছে বিনষ্ট হবে। অবশ্য বর্তমান সরকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হিসেবেই সব ক্ষুদ্রজাতি, জনগোষ্ঠীর জানমাল ও সম্পদ সুরক্ষার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। (শেষ)
লেখক: অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান