কর্মক্ষেত্রে নারী, নারীর কর্মক্ষেত্র
অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা
বাংলাদেশের মতো একটা ধর্মভিত্তিক দেশ, যেখানে এখানো প্রবলভাবে বিদ্যমান ধর্মীয় গোড়ামী, কুসংস্কার ইত্যাদি। বর্তমানে আমরা নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতায়ন, নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার কথা বলছি। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নারীবান্ধব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতায়ন, নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীরা এখন এগিয়ে আসছে, এগিয়েও যাচ্ছে তারা। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। যেমন বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের মতো একটা দেশ যেখানে ধর্মকে একটা বড় পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় গোষ্ঠী এখনো এখানে সক্রিয়। এই অপগোষ্ঠী মনে করে, এ দেশের মেয়েদের শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যে গতিতে তাদের এগোনো সেটা তারা পারছে না, সেটা নিয়ে একটা বিতর্ক থেকে যায়। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় যে পরিমাণ নারী শ্রমিক আছে তা আসলেই সংখ্যার তুলনায় অনেক কম। পোশাক কারখানায় নারী শমিকদের কাজ করা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এরা ব্যাভিচার করে সেখানে! এমন সব কথাও তাদের শুনতে হয়। তবু তারা থেমে নেই, এগোচ্ছে। নানা বাধা, বিপত্তিও তাদের টলাতে পারছে না। পোশাক কারখানায় কাজ করছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের কর্মপরিবেশটি কি উন্নত? কর্মক্ষেত্রটি কতটা নারীবান্ধব? তারা কি শ্রমের ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে? কর্মক্ষেত্রে যে পরিবেশ থাকা উচিত, যেমন স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা উচিত। মেয়েরাও ওভার টাইম কাজ করে। অতিরিক্ত এই শ্রমের ন্যায্য মজুরি তারা পায় কিনা, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, ওয়াশরুম আছে কিনা, তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে দেওয়া, তাদেরকে তালাবন্ধ করে রাখা হচ্ছে কিনা, এমনকি যে কারখানায় তারা কাজ করেন সেখানে শারীরিক, মানসিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছে কিনা এ বিষয়গুলোর দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। মনিটরিং করতে হবে। এই জায়গাগুলোতে একটা ঘাটতি রয়ে গেছে। যতদিন পর্যন্ত এই ঘাটতি রয়ে যাবে ততদিন পর্যন্ত নারীর কর্মক্ষেত্রে সঠিক অবস্থানটা নিশ্চিত হবে না। যতদিন শোষণ-নির্যাতন, ন্যায্য মজুরি পাবে না নারীরা ততদিন নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ আমরা দেখতে পাব না।
পরিচিতি: সমাজবিজ্ঞানী
মতামত গ্রহণ: ফাতেমা-তুজ-জোহরা
সম্পাদনা: আশিক রহমান