বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, প্রযুক্তি কেড়ে নিয়েছে হৃদযন্ত্রের বেগ
প্রবাল দত্ত
আর তখনই চোখে পড়ল সেই ‘উদ্বেগ-জাগানিয়া’ খবরটি। খবরটির সারাংশ অনেকটা এ রকম, চল্লিশ বছর বয়সে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আধুনিক যুগের বাচ্চাদের হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা শতকরা ২৫ ভাগ হ্রাস পাবে। আর এজন্য দায়ী গাড়ি, স্ট্রলার (বাচ্চাদের জন্য তৈরি চাকাযুক্ত চেয়ার বিশেষ) এবং ট্যাবলেট কম্পিউটার। আধুনিক যুগের বাচ্চারা শারীরিক কসরত হতে পারে এমন খেলাধুলায় তুলনামূলকভাবে কম অংশগ্রহণ করে কারণ তারা ভিডিও গেমসে আসক্ত আর এসব ভিডিও গেমস খেলার জন্য ট্যাবলেট কম্পিউটারের জুড়ি নেই। ভিডিও গেমসের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি এবং অপর্যাপ্ত ব্যায়াম তাদেরকে দিনদিন অথর্বতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। আজকের যুগের বাচ্চারা অল্পতেই ক্লান্তি বোধ করে, হাফিয়ে যায়। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ১৯৭১ সালে ৮০০ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে একটি বাচ্চার তিন মিনিট সময় লাগত আর আজ এই সময় বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার মিনিটে। এখনই যদি বাবা-মারা সতর্ক না হন তবে এই অবস্থার আরও অবনতি ঘটবে।
ফরাসি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফ্রঁসোয়া কারে বলেছেন, এ অবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য মা-বাবাদেরকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ফিজিক্যাল ফিটনেসের দিক থেকে আজকের যুগের বাচ্চারা তিরিশ বছর আগের বাচ্চাদের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে। এই অবস্থার যদি পরিবর্তন না হয় তবে আজকের বাচ্চারা দীর্ঘ সুস্থ জীবন লাভ করবে না। তিনি আরও বলেন, হাঁটার বয়সে বাচ্চাদের হাঁটতে হবে, স্কুলে যাওয়ার বয়সে তাদের স্কুলেই যেতে হবে। বাবা-মায়েদের উচিত সপ্তাহে দুদিন বাচ্চাদেরকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়া, হাঁটতে যাওয়া এমনকি তাদের সঙ্গে ফুটবল খেলা; মোটকথা বাচ্চাদেরকে বোঝাতে হবে যে আমাদের শরীর তৈরি হয়েছে সচল রাখার জন্য, অথর্ব হয়ে পড়ে থাকার জন্য নয়। ঝুহফরপধঃ ঘধঃরড়হধষ ফবং চল্কফরধঃৎবং ঋৎধহম্ফধরং এর প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসিস রুবেলও অনেকটা অধ্যাপক ফ্রঁসোয়া কারের সুরেই কথা বলেছেন। তিন থেকে ছয় বছর বয়সী বাচ্চাদেরকে পায়ে হেঁটে স্কুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, বাচ্চাদেরকে অল্প বয়সেই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে কারণ বাচ্চাদের বয়স আট ছাড়ালে তাদেরকে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী করে তোলা কঠিন। (চলবে-২)
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান