ছয় দফা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ
নূহ-উল-আলম লেনিন
ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে লাহোরে এই প্রস্তাব উপস্থাপিত করেন এবং লাহোর গোল টেবিল এই প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে ভেঙে যায়। তারপর বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে ঢাকা বিমানবন্দরে প্রথমে ছয় দফার ব্যাখ্যা করেন। আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটিতে এটা গৃহীত হয় এবং এই কাজটি করেন বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ফেব্রুয়ারির পরে এই দাবি নিয়ে সারা দেশব্যাপী প্রচার করেন। এই প্রচারের ফলে অভূতপুর্ব গণজাগরণ সৃষ্টি হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এই কয়েক মাসের মধ্যেই আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর অনুষ্ঠিত হয় এবং বিভিন্ন জেলাতে বিশাল বিশাল জনসভায় ছয় দফার পক্ষে জনমত গঠিত হয়। প্রকৃতপক্ষে ছয় দফা তখন গণদাবিতে পরিণত হয়। পরবর্তীতে আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। এই গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ১৯৬৬ সালে ৭ জুন বাংলাদেশের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বপ্রথম সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এই হরতালে পুলিশের গুলিতে মনু মিয়াসহ ১৯ জন নৃশংসভাবে নিহত হন।
বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের ফলে এই আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়বে, স্তব্ধ হয়ে যাবে এটা পাকিস্তানিরা মনে করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুসহ আরও নেতাদের গ্রেফতারের ফলে এই আন্দোলন আরও গভীর হয় এবং জনগণ এটা বুঝে নেয় যে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের এই ব্যাপারে কোনো আপোস করা যাবে না। এই ছয় দফা দাবিকে কেন্দ্র করেই ধীরে ধীরে আবার আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। একদিকে বঙ্গবন্ধুকে তখন গ্রেফতারের পরে ১৯৬৮ সালে তার বিরুদ্ধে আগরতলা ষঢ়যন্ত্র মামলা জারি করে এক নম্বর আসামি করে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। ক্যান্টনমেন্টে আটক করে সেখানে বিচার আসন শুরু হয়। আর অন্যদিকে দেশের মানুষ বিশেষ করে ছাত্রসমাজে এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে থাকে। ১৯৬৯ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ছয় দফা ভিত্তিক এগারো দফা দাবি প্রণীত হয় এবং এগারো দফার দাবিতে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়। সেই গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতেই আইয়ুব খানের পতন ঘটে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে তারা বাধ্য হয় এবং বঙ্গবন্ধুকে ছাত্র সমাজ রেসকোর্স ময়দানে সংবর্ধনা দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় নেতাকে বঙ্গবন্ধু হিসেবে ভূষিত করা হয়।
পরিচিতি: লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিক
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান