ইউনূস প্রসঙ্গে সরকারের সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত বন্ধ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পুনর্বহাল করতে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। এই অভিযোগ শেখ হাসিনার সরকার থেকে অনেক আগেই করেছিল। তখনকার সময়ে সরকার ইউনূসের বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি এনেছিলেন সেটির সত্যতা অবশ্যই আছে।
হিলারি ক্লিনটন অন্যায়ভাবে বিভিন্ন সোর্সে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে চেষ্টা করেছিলেন ইউনূসকে স্বপদে পুনর্বহাল করতে। ড. ইউনূস সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ায় চাপ প্রয়োগের কাজটি হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে করেছিলেন।
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ড. ইউনূসের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বিল ক্লিনটন যখন আরকানসাসের গভর্নর ছিলেন তখন থেকেই হিলারির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে ইউনূসের। ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটনের পারিবারিক বন্ধু। এছাড়া ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের অন্যতম একজন দাতাও।
ইউনূস এবং হিলারির সম্পর্কটি আবার আলোচনায় নিয়ে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রধান। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে পরিচালিত একটি দুর্নীতির তদন্ত বন্ধের জন্য সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন তার অফিস বা পদ ব্যবহার করেছিলেন কিনা সে বিষয়ে জানতে তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটি। এ বিষয়ে কয়েকটি তথ্য জানতে চেয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের কাছে চিঠি লিখেছেন সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান চাক গ্র্যাসলি।
সত্যিকার অর্থে হিলারি ক্লিনটন অফিসিয়ালিভাবে কোনো চাপ প্রয়োগ করেছিল কিনা তখনকার সরকারের উপর। আগামী ১৫ জুনের মধ্যে সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান চাক গ্র্যাসলি জবাব চেয়েছেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয় যে, ‘হিলারির সঙ্গে সম্পর্কের সুবাধে ড. ইউনূস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে বেশকিছু পরিমাণ অর্থ দেন।’ আমেরিকান রাজনীতিতে একটি প্রবাদ বাক্য আছে, ‘পে ফর প্লে’। অর্থাৎ আমি তোমাকে কিছু টাকা দিলাম, এই টাকা নেওয়ার সুবাধে আমার জন্য তুমি কিছু কাজ করে দিবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ইউনূস সাহেব ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে দুবার বেশকিছু পরিমাণ টাকা দেন। আর বিনিময়ে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত বন্ধ করার জন্য তদবির করা হয়। আর এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসে চাপ দেওয়া হয়। নির্দেশনা ছিল যেভাবেই হোক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করার।
শেখ হাসিনার সরকার ইউনূস প্রসঙ্গে যে কথাগুলো বলেছিল বা আনীত যে অভিযোগ ছিল তা স্পষ্টতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি আগামী ১৫ জুনের মধ্যে যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে সেখানে বিষয়টি আরও উঠে আসবে।
বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা হিলারির কাজ ছিল কূটনৈতিক দিক দিয়ে অকূটনৈতিকসুলভ। বাংলাদেশের তরফ থেকে বরাবরই বলা হয়েছিল আইনের পক্ষে যা আছে আমরা সে আইন অনুযায়ী এগিয়ে যাব। বাংলাদেশ সরকার ইউনূসের বিরুদ্ধে তখন যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন সেটা সম্পূর্ণ আইনানুগভাবে করেছিল।
হিলারি ক্লিনটন নীতি লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করার যে অভিযোগ উঠেছিল তা ঠিকই। সিনেটের তদন্তের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তখন যে অভিযোগ ইউনূসের বিরুদ্ধে এনেছিলেন সে কথাটি আবারও প্রমাণিত হলো।
হিলারির বিষয়ে সিনেটরের বিচার বিভাগের কমিটির প্রধানের জানতে চাওয়ার ঘটনাটি ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলের ভেতরে একটা অন্তর্দ¦ন্দ্ব কাজ করে। যদিও এখানে আমাদের আগ্রহের জায়গাটি খুব বেশি না।
তবে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারটা সরকার যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে সেটা ঠিক ছিল। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে ড. ইউনূসকে অপসারণ আইনগত দিক দিয়েও বৈধ ছিল। কেননা বাংলাদেশ সরকার যে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলেন তা আপিল বিভাগেও প্রমাণিত হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তটি যে সঠিক ছিল আজকে মার্কিন সিনেটে এ বিষয়ে শুনানি চলছে।
সিনেটের শুনানির বিষয়টি হলো আমেরিকার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে। সেখানে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে এ বিষয়টির সঙ্গে যখন বাংলাদেশ সরকার জড়িত। আর ড. ইউনূস একজন বাংলাদেশি হিসেবে হিলারি ক্লিনটনের কাছে অনুরোধ করেছিলেন আনীত অভিযোগের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগ করে তদন্ত বন্ধ করতে।
সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন ইউনূসের বিরুদ্ধে সেটি প্রমাণিত হয়েছে সরকারের পদেক্ষপ সঠিক ছিল। সরকারে পদক্ষেপ শুধু আপিল বিভাগের রায়ই নয় মার্কিন সিনেটে এ বিষয়ে যে শুনানি চলছে সেটা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত করে সরকারের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
লেখক : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ : বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা : আশিক রহমান