দুনিয়া তেতে উঠছে, আমরা সাবধান তো?
দুনিয়ায় এখন সন্ত্রাসের খবর আবার জেঁকে বসেছে। মিডিয়া খুললেই নানা দেশে সন্ত্রাসী হামলার খবর দেখছি। ইংল্যান্ডে চলছে ক্রিকেটের বড় আসর। আর সেদেশেই লন্ডন ব্রিজের তলায় ছুরিকাহত করে মারা হয়েছে মানুষদের। মেলবোর্ন ও আমরা সন্ত্রাসের খবর দেখেছি। এগুলো যেমন নতুন নয়, তেমনি এ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলাও ক্রমেই মানুষের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে। এর সঙ্গে যে আন্তর্জাতিক রাজনীতির গভীর যোগাযোগ আছে সেটা আমরা না বললেও বুঝতে পারি। ইদানিং পাকিস্তান আফগানিস্তান বা এমন দেশগুলো আর শিরোনাম হয় না। কারণ সেখানে মারামারি, হানাহানি নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়ে গেছে। অথবা সেগুলো আর বিকোয় না। যেন কোনো কোনো দেশে মানুষের জান থাকাটাই আশ্চর্যের। আর কোনো কোনো দেশে মারা যাওয়াটা মেনে নেওয়ার মতো নয়।
গোড়াতেই বলি আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে সেটা হবে একতরফা এবং সমাধান দূরে থাক কোনো সম্ভাবনার চিহ্নও পাওয়া যাবে না। কারণ আমাদের জনগণকে অন্ধ করে রাখার কারণে আজ তারা কিছুই দেখতে পায় না। আমি অজস্র শ্বেতাঙ্গদের জানি যারা আমেরিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সমানভাবে কথা বলেন। সিরিয়া আইএসের পাশাপাশি এদেরও ঘৃণার চোখে দেখেন তারা। না, আমরা তা মানি না। দুনিয়ার যেখানে যা হোক কথিত ভ্রাতৃত্ববোধের নামে পাশে দাঁড়ানো হচ্ছে আমজনতার ইচ্ছে। আর যারা চতুর ও লেখাপড়া জানেন তারা গা বাঁচিয়ে দোষ চাপিয়ে দেন অন্য কারও ওপর। কোথাও আমেরিকা, কোথাও ইসরায়েল, কোথাও ভারত, কোথাও আইএস-এর ওপর দোষ চাপিয়ে আমরা গুলশানের ঘটনাকে ত্বরান্বিত করি। অবশ্য তাতেই বা কি? তাহমিদ তো এখন খালাস পেয়ে বহাল তবিয়তে আছে দেশে।
আজ খবরে দেখলাম কানাডা থেকে পালিয়ে যাওয়া এক সন্ত্রাসী এখন বাংলাদেশে। এটা বড় ধরনের কোনো মস্তান বলে খবর হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখুন এমন কতজন আছে আপনার এলাকায়। না থাকার কারণ কি? আমরাই তো কৌশলে অপকৌশলে এদের আশ্রয় দিচ্ছি। বেশিরভাগ মানুষ ধর্ম ও অন্ধ বিশ্বাসের কারণে এদের কথা গোপন রাখে। একশ্রেণির মানুষ মনে করে এভাবেই সভ্যতা ও সভ্য দেশগুলোকে সাইজ করা যাবে। আর সুশীলেরা নিজেদের পরিবার পরিজন বাইরে রেখে নিজেরা এদের মদদ বা প্রশ্রয়ের নামে ফায়দা লুটেন। এখন রাজনৈতিক দল, সরকারি দলও মনে করে বিভাজন রেখার মানে নেই। ধর্মের নামে মাতম করা দলের সঙ্গে সন্ধি না করলে গদি টিকবে না। এমন বাস্তবতায় কবে কখন কিভাবে মাশুল দিতে হয় কে জানে? বিশ্ব রাজনীতিতে আবার নতুন দামামা। কাতারের নাম এতদিন শিরোনামে আসেনি। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের পরপরই কাতার পড়েছে নতুন বিপদের মুখে। মনে হচ্ছে আরেকটি ফ্রন্ট খোলার চেষ্টা শুরু হলো। কে জানে এর জের কতদূর যায়। আমাদের যারা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা হিতৈষী তাদের বলি চোখ কান খোলা রাখুন। আজকাল কম্পিউটার, মোবাইল বা হাতের যেকোনো যন্ত্রে আপনার সন্তান বিপদ ডেকে আনতে পারে। বয়স যখন অ্যাডভেঞ্চারের, বয়স যখন ঝুঁকি নেওয়ার তখন তাদের শুদ্ধ পথে না রাখলে বিপদ এড়ানো যাবে না। দায়িত্ব নিন। স্বীকার করুন আমাদের ভেতরেই গলদ। আমরা মানি না আমরা পাহাড়ি হিন্দু, বৌদ্ধ এমনকি প্রগতিশীল মুসলিমদেরও রাখি বিপদের মুখে। আতঙ্কের মুখে। তাহলে বাকি সব সামলাবো কি করে? দুনিয়া উত্তপ্ত হচ্ছে আবার। সাবধান বাংলাদেশ।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান